প্রয়োজনে নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি বাড়াতে হবে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি

| বৃহস্পতিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ সোমবার কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ রকম ঘটনা ঘটে।

এতে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানায়, পাহাড়েসমতলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা। জামাতুল আনসারের শীর্ষস্থানীয় এক নেতাসহ সশস্ত্র সদস্যদের অবস্থানের খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল ভোরে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালায়।

গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে মাসিকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান ও শুরা সদস্য। আর তার সহযোগী আবুল বাশার ওরফে আলম এ সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, একটি খালি কার্তুজ, দুটি একনলা (দেশীয়) বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১০০ রাউন্ড পয়েন্ট টুটু (.২২) বোরের গুলি, নগদ ২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কথা র‌্যাব জানিয়েছিল গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে। তখন র‌্যাব জানায়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলে দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছে জামাতুল আনসার। এরপরে পাহাড়ে ধারাবাহিক অভিযানের খবর জানিয়ে আসছে এলিট ফোর্স র‌্যাব।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে হাতে পৌঁছে গেছে অস্ত্র। অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পের ভেতরেবাইরে ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে এ দেশের অস্ত্র কারবারিদের সম্পৃক্ততায় পাহাড়ের গহিন অরণ্যে স্থাপন করা হয়েছে অস্ত্র তৈরির কারখানা।

জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে। শুধু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নয়, ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে লেগে যায়। স্থানীয় অনেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। নানাভাবে তারা অপরাধপ্রবণতায় জড়িত। এরা আক্রোশী মনোভাবের। সব বিবেচনা করেই প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক চুরি, ডাকাতি, খুনগুম, অপহরণমুক্তিপণ কোনোভাবেই করতে দেয়া হবে না। এসব অপরাধ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’ গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৬তম সভায় মন্ত্রী একথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকের তালিকা বা তথ্য নানাভাবে মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায়। তালিকা হলেই অপরাধী বলা যাবে না। এসব যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। আশা করা গিয়েছিল, মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সাড়ে পাঁচ বছর পার হলেও মিয়ানমার সরকার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। মিয়ানমারে এমন একটি সরকার ক্ষমতায় আছে, যারা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি কিংবা আন্তর্জাতিক জনমত, কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করে না। কিন্তু তাদের অপরাধ তৎপরতা বিষয়ে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো রোহিঙ্গা সংগঠন যাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সীমান্তরক্ষীদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। প্রয়োজনে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে