প্রিয়জনের মন রাঙাবে চকরিয়ার ফুল অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

চকরিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ফুল চাষিদের মাঝে তোড়জোড় চলছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগাম অর্ডার এসেছে। চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত চাষি ও বাগানের শ্রমিকরা। অন্যান্য বছরের মতো এবার অন্তত অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন এখানকার শতাধিক চাষি।

করোনা সংকটের শুরু থেকে গত কয়েক বছর মলিন ছিল এখানকার ফুল চাষিদের মুখ। অন্যান্য খাতের মতো ফুল খাতেও চাষিদের গুণতে হয়েছে লোকসান। তবে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছেন এখানকার ফুল চাষিরা। এরই মাঝে হাজির হয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আছে বসন্ত উৎসব। এই দুই পর্বকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ ধরে নানারকম ফুল বিকিকিনির ধুম পড়ে যায় উপজেলার বরইতলী, হারবাংসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে।

ফুল চাষিরা জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব ঘিরে তরুণতরুণীদের আয়োজনের কমতি থাকে না। আর ফুল ছাড়া তো ভালোবাসা দিবস এবং বসন্ত উৎসব উদযাপনের কথা চিন্তাই করা যায় না। তাই চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা কক্সবাজারের চকরিয়ার গোলাপনগর খ্যাত বরইতলী ও হারবাং থেকে আগেভাগেই বিভিন্ন প্রজাতির ফুল কিনে নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে থেকেই পাইকাররা আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছিলেন।

বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের ফুল চাষিরা জানান, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারীপুরুষ শ্রমিক বাণিজ্যিকভাবে সৃজিত রকমারি ফুলের বাগানে পালাক্রমে শ্রম দিয়েছেন। বিশেষ করে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুলের বেশি কদর থাকায় সেসব ফুল বেশি বিক্রি হয়েছে। এতে লাভের মুখ দেখেছেন চাষিরা।

চকরিয়ার ফুলের বেশি চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি, চেরাগী পাহাড়, আগ্রাবাদসহ মহানগরের বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা এখানকার চাষিদের কাছে অন্তত এক মাস আগেই নানা রঙের গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ নানা ফুলের অর্ডার দিয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম, কঙবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক পাইকার অর্ধ কোটি টাকার ফুলের অর্ডার দিয়ে রাখেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরইতলী গোলাপ বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো. মঈনুল হোসেন।

বরইতলী মাইজপাড়ার ফুল চাষি আহমদ হোসেন বলেন, আমি এক সময় তামাকের চাষ করতাম। তখন মুনাফাও ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু হাড়ভাঙা খাটুনি ও দিনরাত পরিশ্রমের কারণে শরীরের অবস্থা তেমন ভালো যাচ্ছিল না। তাই অন্যের দেখাদেখি তামাক ছেড়ে গত ৯ বছর ধরে উদ্যোগী হই ফুল চাষে। দুই কানি জমিতে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছি। ফলন ভালো, দামও পেয়েছি। খুশি লাগছে।

একতা বাজার এলাকার নজির আহমদ বলেন, প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তোলার পর চট্টগ্রাম ও কঙবাজারের পাইকাররা সরাসরি এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক পাইকার আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছিলেন। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব উপলক্ষে প্রায় ৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

চাষিরা জানান, প্রতিটি গোলাপের দাম পাইকারিভাবে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। গ্লাডিওলাস বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।

বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক আজাদীকে বলেন, দিবস উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় বরইতলীর শতাধিক চাষির প্রত্যেকে ফুল বিক্রি করে পর্যাপ্ত লাভের মুখ দেখেছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন আজাদীকে জানান, দাপ্তরিক হিসেবে প্রায় ২০০ একরে গোলাপ এবং প্রায় দেড়শ একর জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ হয়েছে। ফুল চাষিদের প্রণোদনা বা অন্য কোনোভাবে সরকারি সহায়তা দেওয়ার বিধান না থাকলেও কৃষি দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধ৩৪ সাক্ষীকে হাজির করতে পরোয়ানা