প্রিগোজিনকে নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন পুতিন

খুন করা হয়েছে বলে দাবি প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তার

| শুক্রবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনকে স্মরণ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশে বুধবারের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, বুধবার যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটির ঠিক কী হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে তদন্ত করতে সময় লাগবে। এক সময় পুতিনের খুবই ঘনিষ্ঠজনদের একজন ছিলেন প্রিগোজিন। তার ডাক নাম ছিল ‘পুতিনস শেফ’। বছরের পর বছর ধরে চাহিবা মাত্র প্রিগোজিনের সেবা পেয়েছেন পুতিন। কিন্তু তাদের সেই সম্পর্ক টুটে যায় গত জুনে প্রিগোজিনের নেতৃত্বে কয়েক হাজার ওয়াগনার যোদ্ধার বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। প্রেসিডেন্ট পুতিন ওই বিদ্রোহকে বর্ণনা করেন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে। মস্কোতে প্রিগোজিনের সুদিন যে শেষ হয়ে গেছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেদিনই। কারণ, যে ব্যক্তি বহু বছর ধরে পুতিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তার জন্য হঠাৎ করে বিদ্রোহ করে বসা বাড়াবাড়িই হয়ে গিয়েছিল। পুতিনের জন্য এই অপমান হজম করে যাওয়া কঠিন ছিল।

এদিকে আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড্যানিয়েল হফম্যান গতকাল দাবি করেছেন, সাজানো বিমান দুর্ঘটনায় খুন করা হয়েছে প্রিগোজিনকে। আর সেই হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে পুতিনের নির্দেশে। একদা মস্কোসহ গোটা রাশিয়া জুড়ে সিআইএ নেটওয়ার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হফম্যান বলেছেন, ‘কোনও সন্দেহ নেই পুতিনের নির্দেশেই প্রিগোজিনকে হত্যা করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যেই জুন মাসে ব্যর্থ বিদ্রোহের পরেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি, স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।’

সোভিয়েত যুগে গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির প্রধান ছিলেন পুতিন। গুপ্তহত্যায় বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন হফম্যান। প্রসঙ্গত, বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বেসরকারি সংস্থার ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি ৬০০’ বিমান পশ্চিম রাশিয়ার তেভর অঞ্চলের কুজনেকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে প্রিগোজিনসহ মোট ১০ জন ছিলেন। তাদের সকলেরই মৃত্যু হয়। অথচ, ওড়ার আগে নিয়মমাফিক ‘ফিট’ সার্টিফিকেট ছিল বিমানটির। এমনকি, ভেঙে পড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগে পর্যন্ত বিমানের পাইলটের সঙ্গে ইন্টারনেটনির্ভর রেডার ব্যবস্থার যোগাযোগ ছিল। প্রিগোজিন ছাড়াও ওই বিমানে ছিলেন ওয়াগনার ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনীর আর এক গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার দিমিত্রি উৎকিন। গত জুনে পুতিনবিরোধী ‘বিদ্রোহে’ তিনিও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাদলের নেতা প্রিগোজিন ভিডিও বার্তায় জানিয়েছিলেন, এখন আফ্রিকার মরুভূমিই তার ঠিকানা। ওয়াগনার বাহিনীতে নতুন করে যোদ্ধা নিয়োগের কথা ঘোষণা করে ‘ইচ্ছুকদের’ যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দিয়েছিলেন তিনি। ভিডিও দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, প্রিগোজিন এখন সাহারা মরুভূমি লাগোয়া কোনও দেশে রয়েছেন। তবে ঠিক কোথায় তিনি ছিলেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে রীতিমত হইচই পড়ে যায়। যদিও তিনি সত্যিই মারা গেছেন কি না, তা নিয়ে সামান্য হলেও সংশয় এখনো রয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ও বেশি দামে পণ্য বিক্রি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রভোস্টের পদত্যাগ চেয়ে আলাওল হলে তালা