প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে সহজতর হতে পারে বিকাশ

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

আজ (২ এপ্রিল) বিশ্ব অটিজম দিবস। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামেও নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরোবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন’। দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে অটিজম বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখায় এ বছর পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১০ জন ব্যক্তি ও ৩টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হবে। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্মানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তরসংস্থা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে নীল রংয়ের আলোকসজ্জা করার কথা রয়েছে।

অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২ এপ্রিল দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম মূলত অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার। এটি এমন এক জটিল অবস্থা যাতে কথা বলা, যোগাযোগ এবং আচরণের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। অটিজমে আক্রান্ত রোগীর পক্ষে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি এবং স্পর্শের মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করা কঠিন। পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। কখনো কখনো আক্রান্তের দক্ষতা অসমভাবে বিকশিত হয়। যেমনকথোপকথনে সমস্যা হলেও সঙ্গীত, গণিত, স্মৃতি বা কোনো নির্দিষ্ট শিল্পে রোগী আবার অস্বাভাবিক রকম ভাল হতে পারে।

লক্ষণ : এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণের বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেনশিশুদের বৃদ্ধির একাধিক স্তর থাকে। দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বৃদ্ধিও এমনই একটি স্তর। এই সময়ে শিশু মাকে দেখে হাসে, কোনো কিছুর দিকে আকার ইঙ্গিতে নির্দেশ করে কিংবা শিশুর শব্দস্ফূরণ হয়। অর্থাৎ সমাজে চলতে শেখার শুরু হয়। এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়াই অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডারের লক্ষণ। কারো সাথে মেলামেশা না করা, অনেক খেলনার মাঝেও কেবল একটি খেলনা নিয়ে খেলা, নতুন কিছুতে আগ্রহ না দেখানো, নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেওয়া বা একটানা আপন মনে থাকার মতো লক্ষণ এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।

চিকিৎসকরা বলছেন, সদ্যোজাত অবস্থা থেকেই এই সমস্যা শুরু হতে পারে। তবে মূলত স্কুলে যাওয়ার বয়সের আগেই মূল উপসর্গগুলো পরীক্ষা করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক শিশুদেরও বৃদ্ধি দেরিতে হতে পারে। বয়স অনুযায়ী শিশুর ব্যবহারে কোনো অসামাঞ্জস্য দেখলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ঝুঁকি : পরিসংখ্যানগত ভাবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে অটিজম চারগুণ বেশি দেখা যায়। তবে যেকোনো জাতিগোষ্ঠী বা সামাজিক পটভূমির মানুষের মধ্যেই এই রোগ দেখা দিতে পারে। জীবনধারার সঙ্গে এর বিশেষ কোনো যোগ নেই। তবে পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি বেশি বয়সে সন্তানধারণ করলে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অ্যালকোহল বা অ্যান্টিসিজার জাতীয় ওষুধ খেলে অটিস্টিক শিশু জন্মানোর ঝুঁকি বেড়ে যায় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

চিকিৎসা : চিকিৎসকরা বলছেন, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বিকাশ সহজতর হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা গেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। রোগীভেদে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও আচরণ ও যোগাযোগভিত্তিক বিভিন্ন থেরাপি, ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, দৃশ্যশ্রব্য মাধ্যমের ব্যবহার ও সৃজনশীল নানা অভ্যাসের অনুশীলনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

এদিকে, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ। সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও শিশু রোগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরী প্রাসঙ্গিক তথ্য তুলে ধরে বলেন, সিডিসি’র সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী প্রতি ৩৬ জন আমেরিকান শিশুর মধ্যে ১ জন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। নিষ্পাপ অটিজম স্কুলের মাধ্যমে স্কুল স্ট্রাকচার, অকুপেশনাল থেরাপি, ল্যাংগুয়েজ থেরাপির উপর বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রতিটি অটিজম শিশুর আচরণ স্বতন্ত্র হওয়ার কারণে তাদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ভিন্ন। তাই ১:১ বা ক্ষেত্র বিশেষে ১:২ ব্যবস্থায় দ্রুত অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল জানিয়ে ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিভাবকেরা পরিবারের অন্যান্য স্বাভাবিক সন্তানের লেখাপড়ার পাশাপাশি অটিজম শিশুর জন্য অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহনে অক্ষম। আবার পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায় যাথাযথভাবে বিশেষায়িত স্কুলগুলো পরিচালনাও অত্যন্ত কঠিন। অটিজম স্কুলগুলোকে এমপিওভুক্তি করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

অন্যদের মাঝে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, যুগ্মসম্পাদক অধ্যাপক টিংকু চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক আশুতোষ দে, প্রশিক্ষণ ও সেমিনার সম্পাদক ড. সুদীপ পাল, নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ, তাহরিন তারান্নুম, মো. জমির হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝুঁকি নিয়ে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ
পরবর্তী নিবন্ধ‘বিভ্রান্তি, মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে জাতিকে সচেতন করতে হবে’