ঝুঁকি নিয়ে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ

ব্যস্ততম সড়কে গাড়ির উপর দিয়ে ওঠানো হয় ভারী জিনিসপত্র নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা

হাসান আকবর | রবিবার , ২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

ঝুঁকির মধ্যে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র‌্যাঙ্কিন যৌথভাবে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ করছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তারা নিয়মমতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যস্ততম সড়কে চলাচলকারী শত শত যানবাহনের উপর দিয়ে ক্রেনে করে ভারী জিনিসপত্র ওঠানামার কাজ চলছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় চার বছর ধরে চলছে এই প্রকল্পের কাজ।

নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের যে কোনো অংশ থেকে মানুষ যাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারে সেজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মূলত এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে নেমে মুরাদপুরলালখান বাজার বিদ্যমান ফ্লাইওভারের সাথে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করা হচ্ছে। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের পাশে ফ্লাইওভার দুটি যুক্ত হচ্ছে। এতে করে মুরাদপুর থেকে ফ্লাইওভারে ওঠা কোনো গাড়ি সরাসরি পতেঙ্গা সৈকত বা টানেল রোড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। পতেঙ্গা থেকে শহরে আসা গাড়িগুলো টাইগারপাস হয়ে লালখান বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনে নিচে নামবে এবং যাদের মুরাদপুর বা বহদ্দারহাট কিংবা ওই রোড ধরে অন্য কোথাও যাওয়া দরকার তারা লালখান বাজার থেকে আবার ফ্লাইওভারে চড়তে পারবে। টাইগারপাসে পাহাড় না কাটার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চার লেনের মধ্যে দুই লেন নিচে নামিয়ে দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। বর্তমানে লালখান বাজার এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম চলছে।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হলেও পরে ডিজাইন পরিবর্তনে নতুন ভূমি অধিগ্রহণসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২শ ৯৮ কোটি টাকায়।

শহরের প্রধান সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজে মানুষের ভোগান্তি হয়। বিশেষ করে ইপিজেড থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকায় বন্দরের কার্যক্রমের পাশাপাশি অফিস আদালতসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কার্যক্রম চালাতে গিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। বড় প্রকল্পের কাজে এমন ভোগান্তি হলেও মানুষ সহ্য করছে।

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিন বড় বড় ক্রেনে এমন সব জিনিসপত্র টানাটানি করা হচ্ছে যাতে যে কোনো সময় ঢাকার মতো অঘটন ঘটতে পারে। কোনো ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই চলছে ভারী জিনিসপত্র স্থানান্তর। রাস্তায় চলাচল করা গাড়ির উপর দিয়ে ক্রেনে ভারী জিনিসপত্রের স্থানান্তর পথচারীদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তারা যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলাকালে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীনতা দেখা গেছে। ক্রেনের সাহায্যে ভারী জিনিসপত্র স্থানান্তরের সময় নিচের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। রাস্তার গাড়ি যেহেতু বন্ধ করা যাবে না, তাই এসব ভারী জিনিসপত্রের স্থানান্তর গার্ডারের মতো রাতের বেলায় করলে ঝুঁকি থাকত না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা দ্রুত প্রকল্পটির কাজ শেষ করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছি। সিডিএ থেকেও আমাদেরকে চাপে রাখা হয়েছে। তাই টুকটাক এদিকওদিক হতে পারে। তবে নিরাপত্তার ব্যাপারটিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ পরিচালনা করছি।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা পুরো কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে দফায় দফায় তাগাদা দেয়া হয়। কর্মকর্তাকর্মচারীসহ নির্মাণ শ্রমিকদেরও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশু পার্ক সরাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন নওফেল
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে সহজতর হতে পারে বিকাশ