প্রবারণার পুণ্য আলোয় আলোকিত হোক ধরা

লিপি বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

প্রবারণা পূর্ণিমা বিশ্বের থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমা হয়ে মধুপূর্ণিমা বা ভাদ্র পূর্ণিমা অতঃপর আজকের এই আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা হলো ভিক্ষু সংঘের বর্ষাব্রত অধিষ্ঠানের ব্যাপ্তিকাল। এবং এই ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসে গৃহীরাও শীল, সমাধি প্রজ্ঞার মাধ্যমে আত্নপরিশুদ্ধির ব্রত গ্রহণ করেন। তথাগত সম্যক সমবুদ্ধের নির্দেশ হলো এই তিন মাস ভিক্ষুও ভিক্ষুণী সংঘ নিরবচ্ছিন্নভাবে ধ্যান – ভাবনায় রত থাকবে। ওহংরমযঃ সবফরঃধঃরড়হ এর মাধ্যমে নিজ নিজ চিত্তের উৎকর্ষ বিধান করবে। এই বর্ষাব্রত অধিষ্ঠানের বিধান একটি অনন্য অসাধারণ মাঙ্গলিক প্রয়াস। কারণ ধর্ম শ্রবণ,ধারণ ও অনুশীলন এই তিনটি অপরিহার্য দিক ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রতে নিহিত রয়েছে। প্রবারণা পূর্ণিমাতে থেরবাদী বৌদ্ধ বিশ্বের ভিক্ষু – ভিক্ষুণীসংঘের বর্ষাব্রত অধিষ্ঠানের সমাপ্তিকরণ। প্রবারণা শব্দের অর্থ আশার তৃপ্তি,অভিলাষ পূরণ, ধ্যান শিক্ষার সমাপ্তি। প্রবারণা পূর্ণিমায় আকাশ প্রদীপ অর্থাৎ ফানুস উত্তোলন করা হয়। এই ফানুস উত্তোলনের একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। তথাগত সম্যক সমবুদ্ধ যখন গৃহী ছিলেন সে সময় কুমার সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগের পর তাঁর মস্তক থেকে চুল কর্তন করে আকাশমার্গে ছুঁড়ে দিয়ে সংকল্প করেছিলেন যদি আমি ভবিষ্যতে বুদ্ধ হই তবে এই কেশ উর্ধ্বদিকে যাবে এবং যদি তা না হয় তবে এই কেশরাশি নিম্নদিকে পতিত হবে। সেই পুণ্যক্ষণে তাঁর কেশরাশি উপর দিকে আকাশমার্গে স্থান পেয়েছিল। এবং তিনি ছয় বছর কঠোর সাধনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন জগতপূজ্য তথাগত সম্যক সমবুদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা গভীর শ্রদ্ধায় সেইদিনের পুণ্যলগ্নকে স্মরণ করে আকাশ প্রদীপ বা ফানুস উত্তোলন করে থাকেন এই প্রবারণা পূর্ণিমায়।
অতীব তাৎপর্যয় এই প্রবারণা পূর্ণিমার দিনটিতে বিশ্বের থেরবাদী সকল বৌদ্ধরা বিহারে গিয়ে শীল গ্রহণ, ধ্যান সাধনা, বুদ্ধ পূজা, আলোকসজ্জা, ফানুস উত্তোলনের মাধ্যমে মহাসারম্বরে পালন করে থাকে।
সম্মিলিত বুদ্ধউপাসনার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি কামনা করা হয়। প্রবারণার পুণ্য আলোয় আলোকিত হোক ধরা বিশ্বে শান্তির অমিয়ধারা বহমান থাকুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবারণা
পরবর্তী নিবন্ধএ দায় কার?