প্রধানমন্ত্রীর আশা জাগানিয়া বক্তব্য বাংলাদেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না

| সোমবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন, বাংলাদেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। তিনি বলেছেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করলেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে। দেশের টাকা দেশেই থাকছে। যারা বলেছিল দেশ শ্রীলংকা হবে, তাদের মুখে ছাই পড়েছে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুক্রবার যুবলীগের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি তাঁর সরকারের বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দেন। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সে সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে আগামী দিনে যে কোনো সংকট মোকাবিলায় দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে হবে না। সে টাকা কাজে লাগাতে হবে। বিএনপি আজকে রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। ’৯৬ সালে আমি যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করলাম, ঠিক তার আগে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ রিজার্ভ আমাদের কাজে লাগছে, কারণ আমরা করোনার টিকা দিয়েছি। আমাদের খাবার, তেল সবকিছু বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। তারপর দুই বছর পর যখন বিশ্ব উন্মুক্ত হয়েছে, তখন ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এসেছে। আমাদের রিজার্ভ তো ব্যবহার করতেই হবে। আট বিলিয়ন আমরা আলাদাভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে তো হবে না। সে টাকা কাজে লাগাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আশা জাগানিয়া। এর আগে তিনি যখন বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলেছেন, তখন এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। কিন্তু শুক্রবারের বক্তৃতায় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা গেলেও বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি’র সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। তারা বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে জোরালো হবে খাদ্য সঙ্কট। বলা হচ্ছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ- ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এবং সাউথ সুদানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রবল। শুধু এশিয়া, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকা নয়, ইউরোপেও বাড়ছে সঙ্কট। কেন দুর্ভিক্ষ আসতে পারে তার কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছে ডব্লিউএফপি। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে- ১. বলা হচ্ছে যুদ্ধ এবং নানা ধরনের সংঘাত খাদ্য ঘাটতির একটি বড় কারণ। ২. দ্বিতীয় কারণ জলবায়ুজনিত। পৃথিবীর অনেক দেশ হয়তো বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে, নয়তো খরায় ভুগেছে। ফলে, কমেছে খাদ্য উৎপাদন। ৩. করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ৪. বেড়েছে সার ও ডিজেলের মতো কৃষি উপকরণের দাম। ৫. মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়াও খাদ্য ঘাটতির কারণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে আছে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা। বৈশ্বিক গম রফতানির ৩০ শতাংশই হয় দেশ দু’টি থেকে। আর সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশই যোগান দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে খাদ্য বাণিজ্যে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে সরবরাহ সঙ্কট। আছে জ্বালানি সঙ্কট। সার ও কৃষিপণ্যের সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে সংকট গভীর। তবু আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সরকার সংকট নিরসনে তৎপর। চক্রান্ত করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি রোধ করা যাবে না। তবু কেউ যেন কোনো অনৈতিক সুযোগ না পায় সবক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে দেশবিরোধী কী কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন যেন কোনোভাবেই থেমে না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৬৮
পরবর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক শিশু দিবস