প্রতি বছর ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার : সিপিডি

কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব

| মঙ্গলবার , ৪ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কর ফাঁকি ও অস্বচ্ছ ব্যবস্থার কারণে সরকার বছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কেটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। হারানো রাজস্বের এই পরিমাণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দকৃত অর্থের ৮ গুণ, আর স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের দ্বিগুণ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর বাংলানিউজের।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে কর্পোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা ও জাতীয় রাজস্ব এবং বাজেটে প্রভাব শীর্ষক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, একটি যৌক্তিক, স্বচ্ছ ও প্রগতিশীল সুসম কর ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার আয় করে থাকে। সেই আয়ই জাতীয় বিভিন্ন উন্নয়নে ও সামাজিক উন্নয়নে খরচ হয়ে থাকে। এই কর ব্যবস্থা যতটা আধুনিক হবে কর আহরণ ও তত স্বচ্ছতার সাথে হবে, উন্নয়নের জন্য আমরা তত ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবো।

তিনি বলেন, আমরা বলে থাকি উন্নয়নে আমাদের বাস্তব জায়গা দরকার। সেই স্পেস তৈরি করতে প্রধান উপায় হলো অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন। অভ্যন্তরীণ সম্পদের সঞ্চালনের প্রধান দিক হলো কর্পোরেট ট্যাক্স। এ জন্য কর্পোরেট করের স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা জরুরি। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে বলেন, ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরও আয়কর দেন না। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে এটি হচ্ছে। অন্যদিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি রেজিস্টার্ড হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি।

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২০১০ সালে করের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। ছায়া অর্থনীতিতে ৮৪ হাজার কোটি টাকা কর ক্ষতি হচ্ছে। যা জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ। এই টাকা যদি পাওয়া যেতো তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি করা যেতো। অর্থাৎ কর নেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। বড় অংশই করের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কর ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে।

কর ফাঁকির ধরণ তুলে ধরে সিপিডির এ গবেষণা পরিচালক বলেন, কর অস্বচ্ছতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কর ফাঁকি ও কর এড়ানো। কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোম্পানি তার প্রকৃত আয় কম দেখিয়ে থাকে। অন্যদিকে আইনি কাঠামোর আওতায় সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে কর কম দিয়ে থাকে। আমাদের দৃষ্টিতে এটাও কর অস্বচ্ছতা। মোয়াজ্জেম হোসেন কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, এক্ষেত্রে ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫২তম। কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। কর এড়াতে গিয়েও কর ফাঁকি দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। আর কর ফাঁকি ৮০ শতাংশ হয় তার মানে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় দেশ। আবার যদি কর ফাঁকি ৫০ শতাংশ ধরা হয়, তাহলে রাজস্ব হারায় ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআত্মসমর্পণ করতে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন ট্রাম্প
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে বাসে মিলল ১৫ রাউন্ড গুলি