প্রকৃতির পালাবদলের সৌন্দর্য

কুমুদিনী কলি | বুধবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

বন্ধু নীরেন বলেছিলো একদিন, হেমন্ত তার ভীষণ প্রিয়! আমার শরৎ! জীবনানন্দের প্রভাব কিনা এটা, জানতে চেয়েছিলাম। বলেছিলো, খানিকটা তো আছেই। তবে অকাট্য যুক্তিও আছে বইকি! হেমন্তকে ভালো না বেসে উপায় কী বলো? বলেছিলো, বন্ধু নীরেন! সেই থেকে হেমন্তকে পর্যবেক্ষণ করা, জানতে চাওয়া। জীবনানন্দ শিখিয়েছেন, বন্ধু নীরেন তাতে সাহায্য করলো। খুব নরম, আদুরে, তুলতুলে সোনালি রোদ আছে হেমন্তের। যেনো কোলে নিয়ে মাখামাখি করতে ইচ্ছে করে। এখনও এখানে কুয়াশা ঝরা শুরু হয়নি। অথচ এখন হেমন্তের শেষ প্রসঙ্গ! নতুন ধানের রূপের পসার বসেছে মাঠে মাঠে। কী রূপ, কী তার গন্ধ! খুব সকালে গাছগুলোর মাথাভর্তি সোনামাখানো রোদ। ঝকঝকে আকাশ, ঝকমকে রোদ! কী মিষ্টি, কী আদুরে! দেখে মনে হয় যেনো সোনা ঝরছে সবখানে। বেলা গড়াতে না গড়াতেই যেনো নেতিয়ে পড়ে আলো। গাছের ফাঁকে ফাঁকে কখন যে টুপ করে ছায়া নেমে আসে! বাতাসে কিসের যেনো একটা টান, গাছেদের যৌবনকাল প্রায় শেষ, এখন শুধু টুপটাপ ঝরার প্রহর গোনা। মাথা ঝাঁকাতেই অগণিত, অজস্র পাতারা ঝরে পড়ছে, লুটোপুটি খাচ্ছে বনতলে। শেষ বিকেলটা হুট করেই বিষণ্ন হয়ে যায়! এত চুপচাপ, এত নিস্তব্ধতা, হুট করে আঁধারে ডুবে যাওয়া- যেনো চাপা পড়ে থাকা অভিমান! শৈশবকে ফেলে এসেছি সেই সোনারঙের ধান কাটার মৌসুমে। যখন এই সময়ে চাষারা ধান কাটতেন, ঢুলে ঢুলে সেই ধান কাঁধে নিয়ে বাড়ির উঠোনে জড়ো করতেন, আবার সেই ধান গাছ থেকে ছাড়ানো,তারপর সেসব শুকনো খড়ের গাদায় বসে আমাদের শীতের রোদ পোহানো। বার্ষিক পরীক্ষার পাট চুকালো তো পড়াও শেষ সে বছরকার মতো। এবার শুধু ছুটি আর এই শীতের মৌসুমকে উপভোগ করা! দস্যিপনার শুরু তো তখনই! সারাটা বিকেল জুড়ে আমরা খেলতাম, এইসব হেমন্তের বিকেলে! আর এখনকার হেমন্ত বিকেলে আমাদের সন্তানেরা ব্যাগ কাঁধে কোচিংএ যায়। কোথায় সোনা রোদ গায়ে মাখানো, কোথায় সেই ধানের গন্ধ, কোথায় সেই পরীক্ষা শেষের উন্মাদনা। সারাটা বিকেল জুড়ে তাদের পড়াশোনা চলে, তারপর এই মুঠোফোনের কৃত্রিম জগতে তাদের বিচরণ। আফসোসের ব্যাপারটা হলো এখানেই। তারা না চিনলো হেমন্ত, না চিনলো জীবনানন্দ। সন্তানদের এই প্রজন্ম পুরোপুরি অনুভূতিবিহীন হয়ে গেলো, আমাদেরই ‘প্রথম’ হওয়া প্রতিযোগিতার কারণে। প্রকৃতির এই পালাবদলের যে সৌন্দর্য, যে বিশেষত্ব তা তারা জানতেই পারলো না!

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিরিয়ে দাও আমাদের কর্ণফুলী
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে