প্রকল্পগুলোর আলোর মুখের জন্য চাই চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা

| মঙ্গলবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। চট্টগ্রামেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘এক লাখ কোটি টাকার দুই শতাধিক প্রকল্প, খুলবে সম্ভাবনার দুয়ার, বদলে যাবে জীবন’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১ লাখ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে দুই শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেওয়া, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এসব প্রকল্প বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংবাদটিতে গভীর সমুদ্র বন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পেন কথা উল্লেখ করা হয়। তবু অনেকের কাছে মনে হয় চট্টগ্রামে পরিকল্পিত উন্নয়ন কম হয়েছে। যেহেতু চট্টগ্রামকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। তাই দেশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে হবে এবং পরিকল্পিত ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামকে বলা হতো রেলওয়ে সিটি। পাকিস্তান আমলে বলা হতো পোর্ট সিটি। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার এক দফা ছিল নৌবাহিনীর সদর দপ্তর হবে চট্টগ্রামে। অথচ সবই এখন ঢাকামুখী। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার আমলাতন্ত্রের কাছে চট্টগ্রাম উপেক্ষিত। বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি করা দরকার। বাংলাদেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে চট্টগ্রামকে অবহেলা করে সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, চট্টগ্রামের জন্য ১৯৬১ সালে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল। একই সময়ে চেন্নাইয়ের জন্য একই মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। তারা এটি বাস্তবায়ন করে কোন পর্যায়ে আছে, আর চট্টগ্রাম কোন পর্যায়ে আছে সেটা অনুমান করা যায় সহজে। এরপরও আরও কয়েকটি চমৎকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে কী পরিমাণ জনসংখ্যা আছে তার কোনো বাস্তব হিসাব নেই। প্রতিদিন নগরে ১০ লাখ ভাসমান মানুষ আসে। তারা নগরের টানে কেউ আসে না। গ্রাম থেকে তাড়িত হয়ে আসছে। যে হারে মানুষ নগরমুখী হচ্ছে সে অনুযায়ী তাদের জায়গা দেওয়ার মতো সুযোগ নগরে নেই। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। কোনো পরিকল্পনা করতে হলে আগে কী পরিমাণ জনসংখ্যা আছে তা শুমারি করে নিশ্চিত হতে হবে। তাঁরা বলেন, শিল্পায়ন ছাড়া কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না। পরিকল্পনায় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পায়নকে ঘিরেই নগরায়ন। শিল্পের জন্য মানুষ আসবে। আর এ মানুষকে ঘিরেই গড়ে উঠবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য বিষয়। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখছে সে অনুপাতে চট্টগ্রামবাসীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি মূল্যায়িত হওয়া দরকার ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি। চট্টগ্রামের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেটিও অক্ষুণ্ন রাখা যায় নি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকি। এটি বলার খাতিরে না বলে বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চাই। চট্টগ্রামকে তার যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্ণফুলী মানেই বন্দর; আর বন্দর মানেই বাংলাদেশ। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে কর্ণফুলীকে বাঁচাতে হবে। কর্ণফুলী না বাঁচলে চট্টগ্রাম তথা বন্দর বাঁচবে না। বর্তমানে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের বড় অভিশাপ। এই জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন হলে চট্টগ্রাম অনেক এগিয়ে যাবে।
সরকারের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এ কথা অনস্বীকার্য যে, চট্টগ্রামে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে মানুষের জীবনযাত্রার মানে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এসব প্রকল্প শেষ করার জন্য প্রয়োজন চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা। লোক দেখানো উন্নয়ন যেমন কোনো কাজে আসে না, তেমনি আন্তরিকতাহীন কাজও যেন শেষ হয় না। চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কোনো কাজই সঠিকভাবে আলোর মুখ দেখবে না। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সব দপ্তরকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রেলওয়ে, বন্দরসহ সব দপ্তরকে একত্রিত হয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন অনেক এগিয়ে যাবে। সবাই একসঙ্গে বসে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে