পেট ব্যথার রোগীকে একদিনে দুইবার অপারেশন, মৃত্যু

সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষসহ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত কমিটি, ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদালতের নির্দেশ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

পেট ব্যথার রোগী এক নারীকে একদিনে দুইবার অপারেশন করা হয়। এরপর রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনা অক্টোবরের। এর দেড় মাস পর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আদালত। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং অ্যানেস্থেসিয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসক।

গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার, অধ্যক্ষসহ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলাটি করেন রোগীর স্বামী ও বায়েজিদের শেরশাহ’র বাসিন্দা মীর আবদুল পিরু। তিন চিকিৎসক হলেন রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. আদনান বাচা এবং অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জয়ব্রত দাশ।

বাদীর আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ আল হেলাল আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমার মক্কেলের স্ত্রী পপি আক্তারের সামান্য পেট ব্যথাকে কেন্দ্র করে দুইবার অপারেশন করে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রথমবার অপারেশন করেন রেজিস্ট্রার ডা. মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। একই দিন দ্বিতীয়বার অপারেশন করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. আদনান বাচা। রেজিস্ট্রার হয়েও স্পর্শকাতর অপারেশন করেন ডা. মোহাম্মদ ইমরান। একপর্যায়ে ভিকটিমের মৃত্যু হয়।

পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করলেও সে বিষয়ে আমার মক্কেলকে কোনো হালনাগাদ তথ্য জানায়নি। মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ গড়িমসি করে। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে আমার মক্কেল আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। আদালত আমার মক্কেলের অভিযোগ শুনেছেন এবং আদেশ দিয়েছেন। আদেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত সূত্র জানায়, মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, ২১ অক্টোবর সকালে পেটে ব্যথা অনুভব করলে ভিকটিম পপি আক্তারকে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা শনাক্ত করেন এবং দ্রুত অপারেশন করার কথা বলেন। এতে বাদী রাজি হলে ২৬ অক্টোবর ভিকটিমকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং প্রথমবার অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষে তিন ঘণ্টা পর ভিকটিমকে বেডে নেওয়া হয়। কিন্তু তখনো প্রচণ্ড ব্যথার সাথে ভিকটিমের ব্লিডিং হয়।

একপর্যায়ে একই দিন রাত ১১টার দিকে ভিকটিমকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় এবং দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হয়। প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় অপারেশনের পরও ব্লিডিং কমেনি। বরং ভিকটিমের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় তড়িঘড়ি করে ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টায় ডিসচার্জ সার্টিফিকেট প্রদান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

উপায়ন্তর না দেখে বাদী ভিকটিমকে নিয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার বলেন, রোগীর কন্ডিশন খারাপ। এত দেরিতে কেন রেফার করেছে? এখন তো রোগীর প্রেসার, রেসপন্স কিছুই নেই। এমন অবস্থার পরও অনুরোধ সাপেক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিকটিম পপি আক্তারকে আইসিউতে ভর্তি নেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরদিন ২৮ অক্টোরব সেখানে তিনি মারা যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকসঙ্গে ৬ সন্তান প্রসব, বাঁচল না কেউ
পরবর্তী নিবন্ধবিপুল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শেষ হলো সিপিডিএল-আজাদী বিশ্বকাপ কুইজ