পি কে হালদার পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার

হাজার কোটি টাকা লোপাট করে পালিয়ে যান ভারতেও মালিক হন বিপুল অর্থবিত্তের

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে ফেরারী পি কে হালদার ভারতে ধরা পড়েছেন। দেশে তার বিরুদ্ধে মামলাকারী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান গতকাল শনিবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, তারা পি কে হালদারের ভারতে আটক হওয়ার খবরটি পেয়েছেন। তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। পি কে হালদার নামে পরিচিত প্রশান্ত কুমার হালদার বেসরকারি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি নামে-বেনামে পিপলস লিজিংসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পালিয়ে যান বলে ২০২০ সালের শুরুতে খবর আসে। এরপর দুদক তদন্তে নেমে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করে। এর মধ্যে একটিতে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল হয়। এদিকে পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা ইডি। তাকেসহ গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে ‘তদন্তের স্বার্থে’ ৫ জনকে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত রিমান্ড মঞ্জুর করেছে পশ্চিমবঙ্গের একটি আদালত। এছাড়া এদের সঙ্গে গ্রেপ্তার এক নারীকে আদালত মঙ্গলবার পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দেয়। খবর বিডিনিউজের।
পি কে হালদার কানাডায় পালিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন ছড়ালেও শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার এবং সহযোগীদের সম্পদের খোঁজে অভিযান শুরু হলে নতুন করে আলোচনা ওঠে। পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ জায়গায় অভিযানের খবর শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যমে আসে।
দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই অভিযান চালায় পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে। এদের সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি রয়েছে বলে খোঁজ পাওয়ার কথাও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ইডি। এর একদিন বাদেই পি কে হালদারের আটকের খবর এল। তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে পি কে হালদারকে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিষয়টা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতে পারবেন। আমি ডিটেইল জানি না। আমি খবরে দেখেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে ভালো হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি। যেহেতু এ দেশে তার বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাকে আমরা নিয়ে আসব। তবে পি কে হালদার আটক হওয়ার কোনো খবর ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি বলে জানান তিনি। তার ভাষ্যে, আনুষ্ঠানিকভাবে জানলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনও বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর তারা ‘অ্যাকশন’ নেবেন।
বাংলাদেশে ফেরত আনার পরের প্রক্রিয়া নিয়ে দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ বলেন, সমর্পণ করা হলে তাকে আদালতে উঠানো হবে। তখন দুদকের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। আদালত তার আইন অনুযায়ী নিজস্ব যে অর্ডার দেবে দুদক সেই মোতাবেক কাজ করবে। তিনি জানান, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে যে ৩ ডজন মামলা আছে প্রত্যেকটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। সে ধরা পড়েছে, এটা আমাদের জন্য বিশেষ সুখবর। কারণ ইনভেস্টিগেশনের জন্য যেসব পেনডিং আছে, সেগুলো অনেক সহজতর হয়ে যাবে এই কারণে যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একটা সুযোগ তৈরি হলো।
পি কে হালদারের সঙ্গে তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা এবং তার ভাইও পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে খবর এসেছে। তবে গ্রেপ্তার নিয়ে ইডির আনুষ্ঠানিক কোনো ভাষ্য গতকাল বিকাল পর্যন্ত আসেনি। ইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানায়, পি কে হালদার ভুয়া তথ্য-পরিচয় এবং রেশন কার্ডের মতো জাতীয় কার্ড ব্যবহার করে ভারতীয় নাগরিকত্বও নিয়েছিল শিবশংকর হালদার নামে। ভারতীয় পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন। জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। বর্তমানে সেগুলো সিলগালা করা হয়েছে।
ইডি পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে অভিযান চালায়। সুকুমার মৃধা আগে থেকেই বাংলাদেশে গ্রেপ্তার রয়েছেন; তিনি পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী এবং তার অর্থ দেখভাল করতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নত বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
পরবর্তী নিবন্ধআট উপজেলার জন্য ৮ সাংগঠনিক টিম