উন্নত বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

চট্টগ্রামে আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাড়ে ১৩ বছরের ব্যবধানে দেশের চেহারা পাল্টে গেছে। উন্নয়নের কারণে বহু এলাকা আর চেনা যায় না। বিদেশ থেকে এসে নিজের গ্রামও চেনা যায় না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। গ্রামে-গঞ্জেও বাসায় এসি চলছে। বাসি ভাতের জন্য একসময় হাঁক শোনা গেলেও এখন কাউকে বাসি ভাত দিলে উল্টো মুখের উপর ছুঁড়ে মারবে। খালি পায়ে প্রচুর মানুষ দেখা যেত গ্রামে-শহরে। এখন শহরে তো দূরের কথা, গ্রামেও খালি পায়ে কোনো মানুষ দেখা যায় না। পরিবর্তনের এই জোয়ার জুয়েল আইচের যাদুতে হয়নি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্বের কারণেই হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশ উদ্যোগে নারীর ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ নিজের এলাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, গ্রামে গ্রামে বিউটি পার্লার স্থাপিত হয়েছে। সেখানে অনেক মেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। মেয়েদের এ উদ্যোগকে সরকার উদ্বুদ্ধ করেছে। গ্রাম আর শহরের মেয়েদের দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। যে কোনো অনুষ্ঠানে তারা সুন্দর করে সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে যাচ্ছে। এটিই উন্নয়ন।
মন্ত্রী বলেন, একসময় শহরের আর গ্রামের ছেলেদের মধ্যে পার্থক্য দেখা যেত। গ্রাম থেকে কোনো ছেলে ঢাকা গেলে তাকে দেখলেই বোঝা যেত। এখন আর ওই পার্থক্য নেই। আমার গ্রামের ছেলেরাও বেশ ভুষায় ঢাকার ছেলের মতো স্মার্ট। তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই কে গ্রামের আর কে শহরের। বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কলিম সরওয়ারের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন ও স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ড. বদিউল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মাহফুজা জেসমিন। হাছান মাহমুদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে উদাহরণ। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন। সাড়ে ১৩ বছর আগে আমাদের দেশে কি কেউ কখনো ভেবেছে, একজন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ডিআইজি, সচিব, স্পিকার মহিলা হবেন, এটা কেউ ভাবেনি। কিন্তু এখন তা সম্ভব হয়েছে। নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশে উন্নয়ন সম্ভব না। জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশে নীরব বিপ্লব হয়েছে।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় তিন হাজার ডলার ছুঁইছুঁই। আমরা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি অব্যাহতভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান তাহলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে।
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান একনাগাড়ে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার পুত্র এখন প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। যে দলের নেতৃত্বে সিঙ্গাপুর স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সে দল আজ পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায়। মালয়েশিয়ায় যে দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের বেশি সেই দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। মাহাথির মোহাম্মদ একনাগাড়ে ২২ বছর সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সুতরাং একটি দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যদি গুজব ছড়ানোর অপরাজনীতি না থাকত দেশ আরো এগিয়ে যেতে পারত। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবশ্যই দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যেতে পারব। নারীর অগ্রগতির মাধ্যমে দেশের অগ্রগতি এমন পর্যায়ে যেন আমরা নিতে পারি, দেশ যেন স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে যায়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের পরিবর্তন হয়েছে। এত অপপ্রচার, প্রতিবন্ধকতা, রাজনীতির জন্য মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, জনগণের সম্পত্তি বিনষ্ট করা, নিরীহ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা, সবকিছুতে না বলা এবং দেশে-বিদেশে থেকে অপপ্রচারের রাজনীতি, এত কিছুর মধ্যেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সবাই প্রশংসা করেন। বাংলাদেশকে বহু দেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে স্বীকার করেন। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বর্ষ উপলক্ষে জো বাইডেন যে বাণী দিয়েছেন, সেখানে তিনি বলেছেন বাংলাদেশের অগ্রগতি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য উদাহরণ। যে বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, প্রধান অর্থনীতিবিদ, ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে জার্মান রাষ্ট্রপতি সবাই প্রশংসা করেন। বারাক ওবামা তো তার বাবার দেশ কেনিয়াতে বলেছিলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর বাংলাদেশ থেকে শেখা প্রয়োজন।
ড. হাছান বলেন, আমরা বলেছিলাম ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করব। ২০২১ সাল আসার দুই বছর আগে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য কোয়ালিফাই করেছে। এখন বলেছি ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত করব। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি অব্যাহতভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান তাহলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে।
দেশে কোনো গরিব নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন গরিব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গরিব পেতে হলে শাহ আমানতের মাজারে যেতে হবে। কিন্তু ওখানে গিয়ে আপনি বৃহস্পতিবার খাওয়াতে চাইলে বলবে ডেট খালি নেই। সেখানেও গরিবদের খাওয়াতে হলে সিরিয়াল নিতে হয়। তাদেরকে খাবারের মেন্যু কি সেটা আগে বলতে হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো সমস্যা দেখা দিলে কিছু অর্থনীতিবিদ গজায়। আমি তাদের বলি ভুল ধরা পার্টি। এই ভুল ধরা পার্টি কারো প্রশংসা করতে পারে না। আর কেউ কেউ আছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তা গরম করেন। তারাও প্রশংসা করতে পারেন না। ভুল ধরা পার্টি রাত ১২টার পর উদয় হন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তারা ভুলেও কখনও ফকিরকে ভিক্ষা দেননি। কিন্তু তারা ভুল ধরতে বসে থাকেন। তাদের বাড়িতে নিজেদের আত্মীয়ও যায় না, ঢুকতে পারে না। অথচ রাত গভীর হলেই তারা উপদেশ দেয়া শুরু করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। সেই অর্ধেক নারী যদি দেশের কাজে না আসে তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে না। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাছেও মডেল বলে মন্তব্য করেন। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বহু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় দেশের প্রতিজন মানুষকে পেনশনের আওতায় আনার যে ঘোষণা তিনি দিয়েছেন সেটিও আর্থসামাজিক এবং নাগরিক জীবনের উন্নয়নে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছন্দে ফিরতে চায় বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধপি কে হালদার পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার