পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ যেন দুর্বহ বোঝা

জাহেদ কায়সার | বৃহস্পতিবার , ৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বাস্তবতা যেমন কল্পনার চাইতেও বিস্ময়কর, বাস্তব জীবনের ট্র্যাজেডিও তেমনি সাহিত্যের ট্র্যাজেডির চাইতে অনেক বেশি মর্মন্তুক। ট্র্যাজিক সাহিত্যে করুণা ও ভয়ের বিমোক্ষণ ঘটে, ব্যক্তি জীবনের ট্র্যাজেডিতে কোনো বিমোক্ষণ নেই, আছে করুণা ও বেদনার বিস্তার, আমৃত্যু বয়ে বেড়ানো যাতনা। মানুষের মৃত্যু আনিবার্য। কেউ তা থামাতে পারবে না। আমরা নানা দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত হারাচ্ছি প্রিয়জন, পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে। স্বজন হারানোর বেদনা সারাজীবন বইতে হয়।

প্রিয়জন হারানো কষ্টের কোনো বর্ণনা হয় না। এটি আমরা নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়েছি। এক একটা দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ যায়, বিলাপ করি, আক্ষেপ করি, নানা সংস্থা আর ব্যক্তিকে দোষারোপ করি, আর শেষে সবই কপাল লিখন বলে মেনে নিই। কিন্তু গত ২৯ জুলাই ঘটে যাওয়া মিরসরাইয়ের ঐ ট্র্যাজিক ঘটনা আমরা ভুলবো কী করে? এতগুলো উজ্জ্বল নক্ষত্র নিমেষে নিভে গেল? নিয়তি নিষ্ঠুর। তাই বলে এতো নিষ্ঠুর! মাক্রোবাসের চালক যে ট্রেনের হুইসেল শুনলো না, সেও বুঝি নিয়তিরই বিধান! হাটহাজারী খন্দকিয়া গ্রামের কোচিং সেন্টারের এক দল স্বপ্নবাজ মেধাবী শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে মাক্রোতে বসে প্রাণের উচ্ছ্বাসে গান শুনতে শুনতে গিয়ে ছিল খইয়ারছড়া ঝর্না দেখতে।

একটু অসাবধানতায় মুহূর্তে ঝড়ে গেল ১১ টি তাজা প্রাণ। তাদের মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সহপাঠীরা কী ভাবে সইবে এ শোক। আজ হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের যুগীরহাট, আমানবাজার ও খন্দকিয়া এলাকায় চলছে মাতম। নিহতের স্বজনহারাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। সেদিন মাইক্রোবাস চালকের এতটুকু সাধারণ বোধ কাজ করেনি কী ভাবে রেল ক্রসিং পার হতে হয় ! গেইটম্যানও কি দায়িত্ব পালন করছিল? আজ এসব প্রশ্ন মুখে মুখে। আক্ষেপ করে কী হবে? বড়জোর একটা তদন্ত কমিটি হবে। ব্যাস এইতো। তারপর নিয়তি বলে মেনে নিলেই সব চুকে যায়। কিন্তু একজন পিতা বা বড়ভাইয়ের দৃষ্টিতে যখন দেখি তখনতো আর মেনে নিতে পারি না।

শুধু আমি নই, আমার মতো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অন্তরেই নিশ্চয় মিরসরাইয়ের ঐ ট্র্যাজিক বেদনা সঞ্চারিত হয়েছে। যার বিলোপ ঘটবে না, যা কেবল বিস্তৃত হয়ে থাকবে, নির্বোধ মানুষের সামান্য অবহেলার কারণে অসামান্য সব বিপর্যয় ঘটতে থাকবে, আমাদের মনের কষ্ট কেবল বাড়তেই থাকবে। আসুন আমরা ঐ শাহাদাত বরণকারী তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী গুলোর জন্য, তাদের পিতা-মাতা আর আত্মীয় স্বজনের জন্য দোয়া করি। মহান আল্লাহ কাছে এই বলে আকুতি করি যেন পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ এর দুর্বহ বোঝা যেন আর না ওঠে, আর যেন কোনো মায়ের বুক অকালে খালি না হয়। সবাই যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকারটুকু পায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশহরের ময়লা আর্বজনা আমাদের করণীয়
পরবর্তী নিবন্ধবিপদে কখনো ভয় পাবেন না