পারস্পরিক বোঝাপড়া

প্রতিমা দাশ | বুধবার , ৩০ জুন, ২০২১ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

দুজন মানুষ পাশাপাশি থাকলে ঝগড়াঝাটি খোঁটাখুঁটি হবে মনোমালিন্য হবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই সংসারের সহজাত চিরন্তন বৈশিষ্ট্য এবং যেখানে ভালোবাসাটাই মুখ্য, সেখানে দুইজন মানুষ থেকে তিনজনে হয় কিংবা চারজনের হয় জীবনের একটা সময় পর্যন্ত আমাদের সংসারের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে থাকে সন্তান নামক আত্মার অংশ, তখন জীবনের গতিপথে একটু ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হয়, আমাদের সন্তানদের একটা সুন্দর পরিবেশে বড়ো করা, সুন্দর মন মানসিকতা জীবনবোধ তৈরি করা, একটা মানবিক গুণের পরিচয় দিয়ে মানুষ করা সেটা তখন প্রত্যেক মা বাবার দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ তারা স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে আসেনি, আমরাই তাদেরকে জীবনের প্রয়োজনে এনেছি।
তারা যখন সবকিছু বুঝতে শিখবে অনুধাবন করবে, তখন আমাদের উচিত নিজেদের মধ্যকার সমস্ত ঝগড়াঝাটি, মনোমালিন্য রাগ অভিমানগুলো নিজেদের মধ্যে আড়ালে মিটিয়ে নেয়া ভালো,কারণ সন্তানের সামনে প্রতিনিয়ত যখন আমাদের ক্রোধ, হিংসা ছাড় না দেওয়া রূপটা যখন উম্মোচন হবে তখন তারা ওই খারাপটাকে অনুসরণ করবে। হয়তো এরপরে আমাদের সম্পর্কটা ভালো হয়ে যাবে কিন্তু ওই খারাপ সময়টার থেকে তারা বাবা-মায়ের সম্পর্কের ফাঁকফোকর বের করতে যাবে। তারা বুঝতে পারবে বাবা মায়ের সম্পর্কের ভীত শক্ত নয়, মানসিকভাবে তারা হীনমন্যতায় ভুগবে, নিজের আত্মবিশ্বাস টা থাকবে না, তারা আমাদের ভাঙ্গা-গড়া সম্পর্ক থেকে সুযোগ খুঁজবে, আমি এমনও দেখেছি সন্তানরা মায়ের কাছে বাবার বিরুদ্ধে কথা বলতে কিংবা বাবার কাছে মায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে, ঘরের মধ্যে একটা আলাদা আলাদা দলে ভাগ হাওয়া, একজনের প্রতি আরেকজনের কাদা ছোড়াছুড়ি হওয়া। এক্ষেত্রে তখন আপনি সন্তানের দোষ দিতে পারবেন না, কারণ আমরাই দিনের পর দিন সন্তানের সামনে এভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছি, তারা যা দেখেছে বুঝেছে তার প্রতিফলন টা প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু আমরা সন্তানদের এই পরিবর্তনটা মেনে নিতে পারি না, মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকি, নিজের ভাগ্যের নিজে দোষ দেই, অন্য উদাহরণ টেনে নিয়ে সন্তানদের সামনে বুঝাতে থাকি, নিজের মনের ভিতর প্রতিনিয়ত একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তখন মনে হয় সংসার নামক জীবন টাই একটা তাসের ঘর, এখানে সত্যি আপন কেউ নেই। যে সন্তানকে আমরা তিলে তিলে বড় করেছি সে সন্তান যখন মায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়,মায়ের নামে নেগেটিভ কথা বলে হঠাৎ করে সন্তানদের এ আচরণগত পরিবর্তন হওয়া টা মেনে নিতে ধাক্কা খায়, কিন্তু এর পেছনে মা-বাবা মানে আমাদের আচরণটাই দায়ী থাকে শতভাগ। সেটা যে আমাদের অগোচরে হয়ে গেছে তাও আমরা বুঝতে ও চাই না। নিজের ভুল স্বীকার করতে চাই না। আমি এমন বহু উদাহরণ দেখেছি বাবা-মার মানসিক দূরত্ব থেকে সন্তানরা ফায়দা নিতে চায়, বাবা-মার দূরত্বটাকে ইচ্ছে করে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । একজন মা যখন প্রচন্ড কষ্ট থেকে বলে, আমার সন্তান আমাকে এভাবে কষ্ট দেবে আমি কোনদিন তা ভাবতে পারিনি কিংবা তার এমন আচরণ মানা সম্ভব না, তখন বুঝতে হবে সেখানে মা হিসেবে আমাদের ভুল ছিলো, আমাদের জীবনবোধের চিন্তায় চেতনায় প্রচুর ঘাটতি ছিলো। একজন বাবা যখন বলে আমি ব্যর্থ বাবা আমি আমার সন্তান হয়তো শিক্ষায় দীক্ষায় কর্ম গুণে অনেক উঁচু অবস্থানে গিয়েছে কিন্তু তার কাছ থেকে বাবা হিসেবে সেই সম্মান টুকুও পাচ্ছিনা, তখন সে বাবাকে বুঝতে তিনি সন্তানের শৈশব কৈশোরে যথাযথ সঠিক আচরণ করেননি। এখানে ও একজন বাবার জীবন ও মূল্যবোধের ঘাটতি ছিলো। আসলে এই সমাজে মা বাবা তো সকলেই হয় কিন্তু সত্যি কারের বন্ধুর মতো মা-বাবা কয়জন হয়। একজন ভালো মা বাবা হতে হলে আগে নিজেদের দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বোঝাপড়াটাই আসল কথা, যেখানে দুইজন দুইজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটাই গুরুত্ব দিবে। সন্তানদের সামনে নিজের পাশের মানুষটিকে আইকন হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। দুজন দুজনকে যতোটা বুঝবে সন্তান ঠিক ততোটাই আমাদের বুঝবে।
আর যদি দুজনের পারস্পরিক বোঝাপড়া কিংবা মূল্যবোধের সমস্যা থাকে, কোনভাবেই একসাথে থাকা সম্ভব হয়না তখন নিজেদের মধ্যে বিবাদ ঝগড়াঝাটি মনোমালিন্য সন্তানের সামনে উপস্থাপন না করে, সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদটাই সহজ সমাধান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাউল মন
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে