পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনর্বহাল

অনাস্থা ভোট কাল, ইমরানের জন্য এবার ম্যাচ জেতা কঠিন

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সদ্য ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা দেন। রায়ে আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই। আজ পর্যন্ত নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।’ এই রায়ের ফলে আগামীকাল শনিবার জাতীয় পরিষদে অধিবেশন বসবে। সেখানে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে। অর্থাৎ, ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খানকে এখন আইনসভায় আস্থার প্রমাণ দিতে হবে, যেখানে তার হার আগেই এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে আছে।
বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, ৩৪২ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে অন্তত ১৭৩ জন সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। কিন্তু তার বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব তোলার আগেই ১৭৭ জন সদস্যের সমর্থন জড়ো করে রেখেছে। সেই লজ্জা এড়াতে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক গত ৩ এপ্রিল অভাবনীয় এক রাজনৈতিক কৌশলের মঞ্চায়ন ঘটান, যাকে সংবাদ শিরোনামে ক্রিকেট মাঠের গুগলি বলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল করে দেন এবং ইমরান খানের আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। যার পরিণতিতে পাকিস্তানের সামনে আবির্ভূত হয় এক সাংবিধানিক সঙ্কট। বিরোধীদলগুলো সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য চলে যায় আদালতের হাতে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দেওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সেজন্য সেদেশের জনগণের মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সেই সিদ্ধান্ত আসে এক ঘণ্টা দেরিতে।
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন লিখেছে, রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি জানান, পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ আলোচনা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব ওঠার পর ২৮ মার্চ অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছিল। ডেপুটি স্পিকার ৩ এপ্রিল ওই প্রস্তাব বাতিল করে দেন। তার ওই রুলিং ছিল ‘অসাংবিধানিক’।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর স্পিকারকে ১৪ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হয়। কিন্তু সে সময় ইসলামাবাদে ওআইসি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২৫ মার্চ পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকা হলেও সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন না করেই ২৮ তারিখ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। ২৮ মার্চের অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ।
সংবিধান অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের পর তিন দিন পার হলেই ভোট করা যায়। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেওয়া যায় না। কিন্তু ২৮ তারিখ প্রস্তাব উত্থাপনের পর আবার ৩১ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
এরপর ৩ এপ্রিল অধিবেশন শুরুর দিনই নাটকীয় পরিস্থিতিতে সেই প্রস্তাব বাতিল করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আহ্বানে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। কিন্তু হার মানতে নারাজ বিরোধী দলগুলো সুপ্রিম কোর্টে যায়। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের পদক্ষেপ সাংবিধানিক কিনা সেই প্রশ্নে তিন দিনের শুনানির পর বৃহস্পতিবারে রায় এল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিনে জাল সংস্কার, রাতে মাছ শিকার
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেবেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফসহ চট্টগ্রামের মন্ত্রী এমপিরা