রমজান শুরুর প্রায় মাসখানেক আগে সরকার চিনি আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই সময় পাইকারিতে চিনির দাম কিছুটা কমলেও রমজানের আগে আগে চিনির দাম আবার লাগামহীন হয়ে পড়ে। খাতুনগঞ্জের বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে যায়। অভিযোগ পাওয়া যায়, চিনির দাম আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকে চিনি বিক্রি বন্ধ করে দেন। তবে দীর্ঘদিন উত্তাপ ছড়ানোর পর অবশেষে পাইকারিতে মণপ্রতি চিনির দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
ভোক্তারা বলছেন, পাইকারিতে যখন দাম বাড়ে তখন সাথে সাথে খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কমলে খবর থাকে না। তখন খুচরা বিক্রেতারা বলেন, তাদের চিনি আগের দরে কেনা। ভোক্তারা বাজার নজরদারির দাবি জানান।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৮৮০ টাকায়। গত দুদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ১৩০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি চিনির দাম কমেছে ২৫০ টাকা। তবে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন চিনির আড়তদার জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটি বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয় তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলে কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
কাজীর দেউড়ি এলাকার হক ভান্ডার স্টোরের বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, পাইকারিতে দাম কমেছে কিনা জানি না। আমরা এখনো চিনির কেজি ১১৫ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা কেজিতে ১–২ টাকা লাভ করি। বর্তমান দর হিসেব করলে আমাদের লোকসান দিতে হবে। এর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খাতুনগঞ্জের অনেক দোকানদার চিনি কেনার পর দোকানের বিক্রয় রশিদ দিতে চান না। তারপরও আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে পণ্য কিনি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, বর্তমানে চিনির সরবরাহ বেড়েছে, তাই দাম কমছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সৎ উদ্যোগ থাকতে হবে। বেসরকারি চিনির মিলে নজরদারি জোরদার করতে হবে। এছাড়া সরকারি চিনির মিলগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ বেসরকারি মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চিনির দাম ওঠানামা করছেন। এছাড়া প্রশাসনের নজরদারি আরো বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে উল্লেখ করা হয়, এই সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এছাড়া প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।