পাঁচ দশকের পরিভ্রমণ

নিজামুল ইসলাম সরফী | শুক্রবার , ২৮ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কবি ও কথাসাহিত্যিক ফরিদা ফরহাদ প্রায় পাঁচদশক সময় ধরে এদেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনের এক পরিচিত ও বহুউচ্চারিত নাম। আমাদের নান্দনিক জীবনবোধের তিনি এক স্বাপ্নিক ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সময়ে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

১৯৮৬ সালে প্রথম কবিতার বই জীবনের পঙতিমালা প্রকাশ করেন শিবু কান্তি দাশ, ১৯৯২ সালে কবির সন্তানদের স্কুলের টিফিনের টাকা দিয়ে প্রকাশ করেন অগ্নি স্বাক্ষীর নেই প্রয়োজন, ২০০৫ সালে শৈলী থেকে আয়েশা হক শিমু বের করেন কবিতার বই নদী ও নারী নর ও বন, ২০০৯ সালে শৈলী থেকে প্রকাশিত হয় স্পর্শ পেলেই, ১৯৯০ সালে শিল্পি সৌমেন দাশের প্রচ্ছদে স্মরনিক থেকে বের হয় ছোট গল্প নিঃশব্দ যন্ত্রণা, ১৯৯৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে আইকো থেকে ছোট গল্প আমাকে ভালোবাসতে দাও প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালে শৈলী থেকে বের হয় কিশোর গল্প হীরামন লালমন, ১৯৯৭ সালে দুই পর্বে প্রকাশিত হয় ছড়ার দেশে পড়ার দেশে, খেলতে পড়তে ছড়া বইটি ১৯৯৯ সালে পূর্বা থেকে প্রকাশিত হয়। কবি সাথি দাশ ১৯৯৩ সালে ফরিদা ফরহাদের ছড়া গ্রন্থ স্বপ্নে রাঙা দিনগুলি প্রকাশ করেন। ২০১৭ সালে বলাকা থেকে শরীফা বুলবুল প্রকাশ করেন উপন্যাস “সুন্দর”। এক সময় নারী বিষয়ক পত্রিকা ‘লাবণ্য’ সম্পাদনা করেছেন। কিশোরী বয়সে বেগম মুশতারী শফীর সঙ্গে ‘দৈনিক জামানা’ পত্রিকায় শিশু সাহিত্যপাতা সম্পাদনা করেছেন।

এবার দীর্ঘ বিরতির পর শৈলী থেকে আয়েশা হক শিমু প্রকাশ করেছেন ফরিদা ফরহাদের নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতায় হাঁটাহাঁটি।’ মার্চ ২০২৩ সালে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মোমিন উদ্দিন খালেদ। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বীরমুক্তিযোদ্ধা, কবির জীবনসঙ্গী অকাল প্রয়াত ফরহাদ হোসেন অলককে।

কবিতায় হাঁটাহাটি’র কবিতাগুলো মূলত কবির স্বভাবজাত। কবিতার সাথে ফরিদা ফরহাদের এমন ভালোবাসা, তাই অনেক সময় ছন্দের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে মন যা চায় তাই লিখে যান তিনি। এতে তার মানঅভিমান, দুঃখবোধ, সুখআনন্দ, ভালোবাসার অনুভূতিগুলো বিচিত্র ঢংএ আনন্দে পাঠক মনে দোলা দিয়ে যায়। কবিতাগুলো সব তার যাপিত জীবনের স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষাকে ঘিরে।

পবিত্র ভালোবাসা’ কবিতায় জীবনসঙ্গী ফরহাদএর সঙ্গে প্রেমের স্মৃতিগুলো উঠে এসেছে। ‘নীলগিরি’ কবিতায় পার্বত্য প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়া তুলে এনেছেন কবি। ‘দূরত্বের বেড়াজালে’ অসুস্থ সন্তানের জন্য মায়ের আকুল প্রার্থনার ছবি এঁকেছেন। ‘মা’ কবিতায় মা জননীর স্নেহের স্মৃতিময় পরশ তুলে ধরেছেন কবি। ‘বাবাকে’ কবিতার কবির জীবনে বাবার ছায়া এগিয়ে যাবার প্রেরণা দেয়। আমার গ্রাম বাবা বাড়ি ভূয়াপুরে শৈশব স্মৃতিতে হারিয়ে যান কবি। ‘একজন তাহমিনা’ কবিতায় বাংলার শ্বাশ্বত পরিশ্রমী সরল এক নারীর নিঁখুত ছবি এঁকেছেন। ‘প্রতীক্ষা শেষে’ ও ‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবির হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা স্মৃতিকে সমর্পণ করেছেন। বর্ষায় বাংলাদেশ কবিতায় বাংলাদেশের মানুষের কষ্টের অনুভূতি সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। ‘বিলাস থাক রাজার ঘরে’ কবিতার মানুষের জীবন সংগ্রামের চিত্র এঁকেছেন।

শ্রাবণ নাচে, ভরা পূর্ণিমায়, আমাকে টেনে রাখে, ভালোবাসা ওড়ে যখন, ভালোবাসার অন্য রকম বয়স, আগ্রাসী আগুন, অনেক আশা, ঘর, শ্বেত পাথরের ঘরে, যন্ত্রণা, চাঁদ, ভূল, নিঃসঙ্গতা, হৃদয় উঠোনে, শরৎ চোখে, ভালোবাসা, ক্ষোভ বন্ধু, হোটেল মারমেট, ভালোবাসার রুপ, তুমি আর আমি, কোকিল, কবিতা ভাব জমাতো, প্রতীক্ষা, বন্ধুরা ক্ষমা করে দিলাম, নিয়তি, শ্রাবণী, সংবাদ ছাড়া ঝড়, ইদানিং, মনে পড়ে তাকে, বন্ধু, একার প্রেম, ইচ্ছে করলেই, সমর্পন, সামনে তখন অন্ধকার, ডাইরি, অভিমান মুক্তি চাই, সেই মেয়েটি রাহেলা, বুক জুড়ে আয়ান, কবি, কোথায় হবো একাকার, শিকড়ের টানে, চিঠি পড়তে পড়তে, সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা, আশা দুরাশায়, উম্মনা কবিতায় চা বাগানের মলুয়ার জীবন কাব্যকে কবি তুলে এনেছেন অনুপম বাঙময়তায়। ‘অলক ও আমি’ কবিতায় জীবন সঙ্গী ফরহাদের অকালে চলে যাওয়ার বেদনা ও অপেক্ষায় প্রহর গোনায় স্মৃতিভ্রম নস্টালজিক করে তুলবে পাঠককে। বিস্ময়, ক্ষমা কবিতায় কবির অসাধারণ উচ্চারণ সব মানুষ যেমন মানুষ হয়ে উঠতে পারে না।

কবিতার হাাঁটাহাঁটি কবিতায় নানা ধরনের সময় বৈচিত্র্যের স্বাদ পাওয়া যায়। কবি মূলত প্রেম ভালোবাসা দেশপ্রেম মান অভিমান, আশা, হতাশা, স্বপ্নকে উপজীব্য করে রচনা করেছেন এসব কবিতা। কবিতাগুলো পাঠকচিত্তে দোলা দিবে নিঃসন্দেহে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুপ্তধন
পরবর্তী নিবন্ধদিল দরিয়ার মাঝে