পাঁচ ইউপিতে নৌকা ২ বিদ্রোহী ১, স্বতন্ত্র ২

হাটহাজারী পটিয়া কর্ণফুলী আনোয়ারা ফটিকছড়ি

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ১৬ জুন, ২০২২ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী, পটিয়া, কর্ণফুলী, আনোয়ারা ও ফটিকছড়ি উপজেলার পাঁচ ইউপিতে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন অনেকটা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। ইভিএমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ফলাফল বেশিরভাগই সন্ধ্যার মধ্যে প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, পটিয়া উপজেলার ছনহরায় নৌকা বিহীন ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ফটিকছড়ির ভূজপুরে নৌকাকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী ও কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটায় নৌকার প্রার্থী ধরাশায়ী হয়েছেন বিদ্রোহীর কাছে। হাটহাজারীর ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ও আনোয়ারার পরৈকোড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। ছনহরা : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীক বিহীন উপ-নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ দৌলতী বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। বিকেলে ভোট গণনা শেষে ৯টি ওয়ার্ডের ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতীকে (মোটরসাইকেল) বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৭৯৯ ভোট। নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) সাহাব উদ্দিন পেয়েছেন ১২৪ ভোট, অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহেদুল হক (টেলিফোন) পান ৫৬ ভোট।
ছনহরার এ উপনির্বাচনে ঋণ খেলাপির দায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মামুনুর রশিদ রাসেলের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় নির্বাচন ছিল অনেকটা উৎসবমুখর বিহীন। ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়নি ভোটারদের দীর্ঘলাইন। তবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর রশিদ দৌলতীর সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। এ নির্বাচনে আবদুর রশিদ দৌলতী ছাড়াও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে জাহেদুল হক ও সাহাব উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। ছনহরা টিপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যম ছনহরা ছিকন খলিফা ছিদ্দিক আহমদ মাদ্রাসা, ছনহরা জ্যোতিষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রমেশ-ফনীন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার, উত্তর চাটরা নোমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল বেশি। রিটার্নিং অফিসার ও পটিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরাফাত আল হোসাইনী দৈনিক আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পরৈকোড়া : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজিজুল হক চৌধুরী বাবুল বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফলে আজিজুল হক চৌধুরী বাবুল (নৌকা) ৮ হাজার ৫২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী পরৈকোড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি (আনারস) মো. আলী চৌধুরী পেয়েছেন ১১৮ ভোট, আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দীন সুজন (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৬৬ ভোট, হাসান জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৫৭ ভোট, নাজিম (টেলিফোন) পেয়েছেন ৪২ ভোট এবং আব্দুল মালেক মানিক (চশমা) পেয়েছেন ৩৫ ভোট।
পরৈকোড়া ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, পরৈকোড়া ইউনিয়নে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ করেনি। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ জানান, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।
ফরহাদাবাদ : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীর ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউপি নির্বাচন অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইয়েদ মোহাম্মদ হোসেন কর্তৃক প্রদত্ত ফলাফল বিবরণীতে জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শওকত আলম শওকত (নৌকা) পেয়েছেন ৬ হাজার ১৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নসির উদ্দিন পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৬৯ ভোট। ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে নিবাচিত ঘোষণা করা হয়।
ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যেক কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১১টি কেন্দ্রের প্রায় সবকটিতে সকালে ভোটারের উপস্থিতি সন্তোষজনক হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে ভোটারের উপস্থিতি কমতে থাকে। এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট কারচুপির অভিযোগ তুললে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়- যেহেতু ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম জানান, ৩ নম্বর উদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর সেই এলাকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটের ফলাফল কারচুপির অভিযোগ এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় থানার ওসি রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হয়। তবে এই কেন্দ্র ছাড়া আর কোনো কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে গত রাত ৯ টা ২৫ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখার সময় ফলাফল কারচুপির অভিযোগ এনে লোকজন নিয়ে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ইউএনও গণমাধ্যমকে জানান, কোনো কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়নি।
চরপাথরঘাটা : পটিয়া প্রতিনিধি জানান, কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীতে ডুবল নৌকা! নৌকার প্রার্থী সেলিম হককে পরাজিত করে চরপাথরঘাটায় বিজয়ের হাসি হাসলেন বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ (আনারস)। এ বিজয়ের ফলে তার হ্যাট্রিক বিজয় নিশ্চিত হল। গতকাল বুধবার সকাল থেকে ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
ভোট গণনা শেষে দেখা যায় বিজয়ী ছাবের আহম্মদ পেয়েছেন ৭ হাজার ৯০৯ ভোট, আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিম হক পেয়েছেন ৬ হাজার ১৭৩ ভোট, অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মনির আহমদ (চশমা) পান ১২৮ ভোট। ১ হাজার ৭৩৬ ভোট বেশি পেয়ে হাজী ছাবের আহমদ বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ছাবের আহমদ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বর্তমান চেয়ারম্যান। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। অপর দিকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুস শুক্কুর বলেন, চরপাথরঘাটা ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষ্যনীয়। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ইভিএমর মাধ্যমে এ নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
ভূজপুর : ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ভূজপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী শিপন (আনারস) ৯ হাজার ৭৫৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইব্রাহিম তালুকদার (নৌকা) পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৪১ ভোট। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসির উদ্দিন মুন্সি (অটোরিকশা) পেয়েছেন ১ হাজার ৭৯ ভোট।
জানা গেছে, ফটিকছড়িতে এই প্রথম ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ইভিএমে হল। সারাদিন বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখ পড়ার মত। পূর্ব ভূজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা খায়রুল বশর নামে এক ভোটার জানান, প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিয়ে খুব ভালো লাগছে। খুব সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। শরিয়তুল উলুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসেন ষাটোর্ধ্ব আয়েশা খাতুন। তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে ভালো লাগল। তবে ভোট দিতে কষ্ট হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানায়, ভূজপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীসহ মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ এবং সাধারণ সদস্য পদে ৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার দেবাশীষ দাস বলেন, কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভূজপুর ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের জমির বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত
পরবর্তী নিবন্ধকে কতো ভোট পেলেন