পলি জমে অকেজো স্লুইস গেট

জলাবদ্ধতার আতংকে সীতাকুণ্ডে ৪ ইউনিয়নের মানুষ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের বশরতনগর গ্রামে ছোটকুমিরা খালের উপর নির্মিত স্লুইস গেটটি গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় এলাকার মানুষের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে শুধুমাত্র কৃষিপ্রধান সৈয়দপুর ইউনিয়ন নয় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বারৈয়ারঢালা, মুরাদপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার বেশিরভাগ গ্রাম ডুবে যায়। শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে পানি ধরে রেখে কৃষিতে সেচের জন্য ২০০৩ সালে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। স্লুইসগেটটি দিয়ে আটকানো পানি কয়েকবছর সেচের কাজেও ব্যবহার করেছিল কৃষকেরা।
স্থানীয়দের দাবি, ১০০ ফুটের খাল দখল হতে হতে সেটি এখন কোথাও এখন ৩০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এছাড়া বর্ষায় পলি জমে সেটি গভীরতা একেবারে কমে গেছে। ফলে খালটি দখলমুক্ত, খননকাজ করা ও রাবার ড্যামটি অপসারণ করে সেখানে সেতু নির্মাণ করতে হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য, খালটি খননের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাশ হলে জুনের মধ্যে খালটি খনন করা হবে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, খাল খনন কাজ শুরু হলে সিট অনুযায়ী দখলমুক্ত করে খালটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।সরেজমিনে দেখা যায়, স্লুইস গেইটটির সামনে খালের পানিতে ভাসমান ময়লার স্তুপ। যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। রাবার ড্যামটির তিনটি দরজার একটিরও কপাট নেই। কপাট আটকানোর রড ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশ নেই। খালের পানি আটকে রাবার ড্যামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে সেখানে চারটি সিমেন্টের পাইপ বসানো হয়েছে। স্লুইস গেইটটি পাশে আটকানো নামফলকে লেখা রয়েছে, রাবার ড্যামটির নির্মানকাল ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সাল। এতে ব্যয় হয়েছিল ১৯ লাখ ২১হাজার ৫৯৬ টাকা। বাস্তবায়ন করেছিল এলজিইডি।
কথা হয় আবুল বশর, প্রদীপ, মোহন, গোবিন্দ জলদাসসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে। তারা বলেন, চোরের দল রাতের আধারে স্লুইসগেইটটির কপাটসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে। ফলে শীতে সেখানে পানি জমে থাকে না। বর্ষায় পৌরসভার ময়লা এসে রাবার স্লুইসগেইটটির দরজায় জড়ো হয়ে পানি চলাচলে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে পানি জমে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। তারা আরও বলেন, খালটির দুই তৃতীয়াংশ দখল করে নিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়েছে স্থানীয়দের অনেকে। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত সাগরে যেতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
আবদুল জলিল, সেকান্দর মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, গত ১০ বছর বর্ষায় তাদের ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবারই ঢলের পানিতে ডুবে ধান পঁচে গেছে। গত দুই বছর ধরে বেশিরভাগ কৃষক বর্ষায় চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে।সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, তার ইউনিয়নটি কৃষি প্রধান। দুটি খালের মুখে স্লুইস গেইট অকেজো থাকার কারণে বর্ষায় তার ইউনিয়নের বাসিন্দারা ডুবে মানবেতর জীবন যাপন করে। পৌরসভার মেয়র বদিউল আলম বলেন, স্লুইসগেইটটির কারণে বর্ষায় তার পৌরসদরের বেশিরভাগ এলাকা ডুবে যায়। এমনকি পৌরসভা কার্যালয়, উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তারদের বাসভবন ডুবে যায়। বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকসহ দিনমজুরেরা। তবে স্লুইস গেইটটির অবস্থান পৌরসভা সীমানার বাইরে হওয়ায় এক্ষেত্রে তাদের করার কিছু নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থামছে না ডাকাতি
পরবর্তী নিবন্ধতিন জলদস্যু বাহিনীর তিন প্রধান গ্রেপ্তার আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ