পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত অভিমত : কাদের

| শনিবার , ২০ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে কোনো অনুরোধ করা হয়নি মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতার উৎস জনগণ, বাইরের কেউ ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারে না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পলাশী মোড়ে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে সরকারের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারত সফরে গিয়ে এ বিষয়ে কিছু বলে থাকলে, তা তার নিজস্ব বক্তব্য। খবর বিডিনিউজের।
আগের দিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।
শুক্রবার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে, আমাদের সরকারের কারও বক্তব্য নয়। বন্ধু, বন্ধু আছে। অহেতুক কথা বলে সম্পর্কটা নষ্ট করবেন না। কাদের বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সংশয়, অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমি বলতে চাই, ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। একাত্তরের রক্তের বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। কিন্তু তাই বলে আমরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে অনুরোধ করব- এ ধরনের কোনো অনুরোধ আওয়ামী লীগ করে না। আর শেখ হাসিনা সরকারেরও কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমাদের সমর্থন, ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ। বাইরের কেউ আমাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থনেই ক্ষমতায় টিকে আছে, ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। ভারতের সঙ্গে আমরা বৈরিতা চাই না। ভারতের সঙ্গে বৈরিতা করে ৭৫ এর পর নিজেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চিনে রাখার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সরকার ছিল মাইনোরিটিবান্ধব সরকার। শেখ হাসিনার সরকার মাইনোরিটিবান্ধব সরকার। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। কেউ আপনাদের বাধা দেয়নি।
যারা হিন্দুদের বাড়িতে হামলা করে, মন্দিরে হামলা করে তারা কোনো দলের নয়। তারা দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা আমাদের সকলের শত্রু। এই দুর্বৃত্তায়ন, এদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। গতকালও আমাদের নেত্রী বলেছেন, আপনারা নিজেদেরকে মাইনোরিটি ভাববেন না। আপনারাও মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। আপনারা এদেশে সংগ্রাম করেছেন, আন্দোলন করেছেন। আপনারা মাইনোরিটি নন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের সমান অধিকার। আপনাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কেউ নেই। শুধু চিনে রাখবেন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে। তাদের দোসরদের, তাদের পৃষ্ঠপোষককে। এদেশে তাদের একমাত্র বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি। এরাই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঠিকানা। এরাই তাদের আপনজন। এরাই উসকানি দেয়। এরাই মদদ দেয়। কাজেই এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, মাইনোরিটি নির্যাতন, মা-বোনদের ওপর অত্যাচার, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, মন্দিরে হামলা- যারা এসব করেছে, তারা এখন কী করে? তাদের মুখে জবাব, মায়া কান্না শুনি। তখন ভাবি এদের বোধ-বিবেক কোথায় ছিল। আজ তারা কথায় কথায় মায়া কান্না করে।
সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আপনাদের সামনে স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। এখানে কোনো দ্বিধা-দ্বন্‌দ্েবর অবকাশ নেই। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজমান। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী। ভারতের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বসে এদেশের বহু অমীমাংসিত সমস্যা, সীমান্ত চুক্তি করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ-ভারত দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল ঘটনা শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে ভারতে যাওয়া কথা রয়েছে। তখন হয়তো আরও কিছু বিষয়ে মতৈক্য হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমুদ্রে গভীর নিম্নচাপ
পরবর্তী নিবন্ধমাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মতবিনিময়