যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে গত বৃহস্পতিবার মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর এ দিনে ছোট–বড়, ধনী–গরিব সকলে ভেদাভেদ ভুলে মেতে উঠেন আনন্দ উৎসবে। এতে শামিল হন শিশু–কিশোর থেকে শুরু করে যুবক–বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। সবাই একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন ঈদ আনন্দ। সাধ্যানুযায়ী ঘরে ঘরে মেহমানদারি–আপ্যায়নে ছিল নানা আয়োজন।
এর আগে সকালে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা বজায় রেখে ধনী–গরিব সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে আদায় করেন ঈদের নামাজ। নামাজ শেষ দলমত, শ্রেণি–পেশা নির্বিশেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি–করমর্দনের মাধ্যমে বজায় রাখেন ঈদ উৎসবের হাজার বছরের ঐতিহ্য।
এবার নগরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত। একইস্থানে দ্বিতীয় জামাত সকাল পৌনে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান জামাতে ইমামতি করেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। ঈদের নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া করা হয়।
জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
নামাজ শেষে সমবেতদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশে আবারো নতুন সরকার গঠিত হয়েছে এ বছর থেকে। এই সরকার যুব সমাজের সুশিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। এটা আমাদের লক্ষ্য। যাতে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি সেজন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, যেভাবে দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটাধিকার হারা, সেই অধিকার যেন জনগণ ফিরে পায় সেই প্রত্যাশা এই ঈদে আমাদের রইল।
এদিকে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী বহদ্দার বাড়ির পারিবারিক মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মেয়র বলেন, ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার যে শিক্ষা ঈদ আমাদের দেয় তা সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দরিদ্র শ্রেণির কষ্ট উপলব্ধির যে সুযোগ আমরা পেয়েছি সে শিক্ষাকে ধারণ করে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে লড়তে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
জমিয়তুল ফালাহ ছাড়াও নগরে চসিকের তত্ত্বাবধানে হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন) ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির তত্ত্বাবধানে সকাল ৯ টায় এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সম্মুখ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।