পবিত্র আশুরা অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরন্তর প্রেরণার উৎস

| মঙ্গলবার , ৯ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

আজ পবিত্র আশুরা। ১০ মহররম। বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন একটি দিন। মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ এ দিনটিকে কেউ ইবাদত বন্দেগী আবার কেউ মাতমের মাধ্যমে পালন করে থাকেন। এদিনটি আসমানী কিতাবসমূহের অনুসারীদের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
কেবল আজকের দিন নয়, প্রাচীনকাল থেকে মহররম মাস পবিত্র হিসাবে গণ্য। বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই মাসটি। ইসলামের ইতিহাসে আশুরা মূলত একটি শোকাবহ দিন, কেননা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এদিন নবী মুহাম্মদ-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন কারবালার মরুপ্রান্তরে। এছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, এই দিনে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন নবী মুসা-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয়। নূহ-এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো। এই দিনে দাউদ-এর তাওবা কবুল হয়েছিলো, নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহীম উদ্ধার পেয়েছিলেন; আইয়ুব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন; এদিনে আল্লাহ তা’আলা ঈসা-কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। প্রচলিত আছে যে এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া, পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। ইয়াজিদ মদিনার গভর্নরকে তাৎক্ষণিকভাবে হুসাইন ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনুগত্য (বায়াত) আদয়ের জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু হুসাইন ইবনে আলী তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ, শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন।
অপরদিকে কুফাবাসী যারা মুয়াবিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে অবগত ছিল তারা চিঠির মাধ্যমে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য হুসাইনকে অনুরোধ করেন এবং উমাইয়াদের বিপক্ষে তাকে সমর্থন প্রদান করে। প্রত্যুত্তরে হুসাইন চিঠির মাধ্যমে জানান যে অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি মুসলিম ইবনে আকীল কে পাঠাবেন। যদি তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ দেখতে পান যেভাবে চিঠিতে বর্ণিত হয়েছে সেরূপ তবে দ্রুতই যোগ দিবেন, কারণ একজন ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে কুরআন মজিদের নির্দেশনা অনুসারে কাজের আঞ্জাম দেওয়া, ন্যায়বিচার সমুন্নত করা, সত্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজেকে স্রষ্টার নিকট সঁপে দেওয়া।
তিনি সদলবলে পরিবার পরিজন নিয়ে মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে হুসাইন খবর পান যে আকীলকে কুফায় হত্যা করা হয়েছে। তিনি খবরটি তার সমর্থকদের জানালেন এবং তাদের বললেন যে জনগণ তার সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি কোন সংশয় ছাড়াই তার সাথীদের তাকে ছেড়ে চলে যেতে বললেন। অধিকাংশ সঙ্গী তাকে ছেড়ে চলে যায় নিকটাত্মীয়রা ছাড়া। নিজের মৃত্যু এবং পরিবারের সমূহ বিপদ জেনেও তিনি শেষ পর্যন্ত কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে ৪ হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়। কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং যুদ্ধ শুরু হয়। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন এবং তার ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে। সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মহররম। যুগে যুগে মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা মহররমের ১০ তারিখকে বিভিন্নভাবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশসহ এশিয়া উপমহাদেশের মুসলমানরা এদিনটিকে গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকে। কারবালার এ শোকাবহ দিনটি আমাদের এ শিক্ষাই দিয়ে থাকে, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্যায় ও মিথ্যার প্রতি মাথা নত নয়। এ পবিত্র দিনে আমাদের প্রার্থনা আমরা যেন সত্যের আলোয় আলোকিত হই এবং পৃথিবীতে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধসিঙ্গাপুরের জাতীয় দিবস