পদ্মা সেতু : সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

| শনিবার , ২৫ জুন, ২০২২ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা সেতু। প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়। আজ ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। একেকটি স্প্যানের ওজন প্রায় ৩ হাজার ২০০ টন। ভূমিকম্প সহনশীল মাত্রা ৯ রিখাটার স্কেল।

সেতুর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। মোট ব্যয় ৩০,১৯৩ কোটি টাকা। সেতুটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪,০০০ বর্গ কিঃমিঃ (১৭,০০০ বর্গ মাইল) বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯% অঞ্চল জুড়ে ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। সেতুটিতে ভবিষ্যতে রেল, গ্যাস, বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ও দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ৩,৬৪৩.৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার চওড়া এই সেতুটিকে দেশের সম্ভাব্য দীর্ঘতম সেতু হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

২০০৬-২০০৭ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। এইসিওএম-এর নকশায় পদ্মা নদীর উপর বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প ‘পদ্মা বহুমুখী সেতুর’ নির্মাণকাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়।

ফলে তখন পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়ায় সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। অধিগ্রহণকৃত মোট জমির পরিমাণ ৯১৮ হেক্টর। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৯১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ দৃশ্যমান হয়। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট সর্বশেষ সড়ক স্ল্যাব বসানোর মধ্যদিয়ে সেতুর মূলকাজ সম্পন্ন হয়। ২০২২ সালের ১৪ জুন একযোগে পদ্মাসেতুর সবগুলো বাতি জ্বালিয়ে বিশ্ববাসীকে জানান দেয়া হয় পৃথিবীর ১২২ দীর্ঘ সেতুর উপস্থিতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবাঙালি জাতির গর্ব ও অহংকারের প্রতীক