নৌপথে পণ্য পরিবহনে নতুন সংকট

চাক্তাই খালের ঘাটে প্রবেশ করতে পারছে না বড় নৌকা, ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারী বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে এক সময় সিংহভাগ বাণিজ্য হতো নৌপথে। তবে সময়ের সাথে সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নৌ বাণিজ্যও কমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাতে নৌপথে পণ্য পরিবহন হলেও এখন কেবল কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচরে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এছাড়া গত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেই সময় চাক্তাই একাংশ ভরাট করার ফলে চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় পণ্য লোড আনলোড করতে হতো।

তবে গত বছর স্লুইচ গেটের একপাশ খুলে দিলে ছোট আকারের নৌকাগুলো কেবল খালে প্রবেশ করতে পারছে। তাই ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে ছোট নৌকায় পণ্য নিয়ে সেগুলো বড় নৌকায় লোড করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতে নানা কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে নৌপথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশের মতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চাক্তাই খাল ‘চীনের দুঃখ হোয়াংহো’ নদীর মতো ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। গত দুই দশকে চাক্তাই খালে দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকাকরণের কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারায় খালটি। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে কার্যকর ড্রেজিং না হওয়ার কারণে পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টি ছাড়াই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকার দোকানের গুদামে পানি প্রবেশ করছে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্ল্যাহ বলেন, আমাদের চাক্তাইয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান আসতো। এছাড়া কঙবাজারের মহেশখালী এবং কুতুবদিয়াতে এখান থেকে চাল পরিবহন হয়। কিন্তু বর্তমানে স্লুইচ গেটের কারণে চাক্তাই খালের ঘাটে বড় নৌকা ভিড়তে না পারার কারণে ধানের পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। একই অবস্থা চাল পরিবহনেও।

চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খাল দিয়ে শত বছর ধরে নৌপথে সারাদেশের সাথে বাণিজ্য হতো। সময়ের সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সেটি কমে আসে। সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরুর আগে আমরা তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যানকে বলেছিলাম, স্লুইচ গেট দিয়ে যেন বড় নৌকা প্রবেশ করার ব্যবস্থা রাখা হয়। গত বেশ কয়েকমাস ধরে স্লুইচ গেটের একপাশ খুলে দিলেও দেখা যাচ্ছে, বড় নৌকাগুলো চাক্তাই খালের ঘাটে প্রবেশ করতে পারছে না। এটার জন্য ছোট নৌকায় করে পণ্য নিয়ে কর্ণফুলী মোহনার ঘাটে আবার বড় নৌকায় তুলতে হচ্ছে। এক সময় আমাদের আড়তের সামনে চাক্তাই খালে ৮-১০টি বড় নৌকা দাঁড়িয়ে থাকতো। আমার মতে, স্লুইচ গেটের নৌ চলাচলের পথগুলো আরেকটু প্রশস্ত করা হলে বড় নৌকা প্রবেশ করতে পারতো। এখন মনে হচ্ছে, আমাদের জন্য আরেকটি স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হলো।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চাক্তাই খালে বড় নৌকা প্রবেশ করতে না পারার কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের নৌকায় বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল পাঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপ এবং হাতিয়াতে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর রসবোধ
পরবর্তী নিবন্ধঅবশেষে ভাসানচরে সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা