নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে সমন্বয় আনার জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে

| রবিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, বাসা ভাড়া, পরিবহন খরচসহ সব কিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ এখন রয়েছেন আর্থিক চাপে। কীভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় সামলানো যাবে-তা নিয়ে অস্থির। ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী থাকা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে জীবনযাত্রার খরচ। সাধারণ মানুষ তো মূল্যস্ফীতি বোঝে না। তারা জানে এখন আর কোনো কিছু তাদের হাতের নাগালে নেই।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, সব কিছুর দাম যেভাবে বাড়ানো হলো, তার কোনো অর্থনৈতিক ভিত্তি নেই। সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি আজ এ অবস্থায় বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। আসলে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আর্থিক চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের ওপরে থাকা চাপ কমে আসবে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে। তেলের দাম কমানো বা সমন্বয় করা হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে সমন্বয় আনার জন্য সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। নির্দিষ্টভাবে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করতে পারে। ফলে স্বল্পবিত্ত মানুষের বোঝার চাপ কিছুটা কমতে পারে।

গত ৩রা নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘বাড়ছে সব ভোগ্যপণ্যের দাম’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে বাড়ছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। তেল-চিনির দাম বেড়েছে আগেই। এখন এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ, আদা, রসুন এবং গরম মসলার দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বাড়তি। তাই বাজার চড়া। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি খোলার অনুমতিও কম দিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কভিড মহামারির অভিঘাতে বৈশ্বিক অর্থনীতি ২০২০ সালে যে গভীর মন্দায় পড়েছিল, ২০২১ সালে তা থেকে বের হয়ে এলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আরেকটি ধাক্কা লাগে। মহামারির সময় তৈরি হওয়া সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যার সঙ্গে যোগ হয় বিভিন্ন পণ্যের বিশেষ করে জ্বালানি এবং খাদ্যপণ্যের সরবরাহে বাধাবিঘ্ন। একদিকে ছিল পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, তার ওপর যোগ হয় সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।

মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে গতানুগতিক ধারার হাতিয়ার- সুদের হার বাড়ানো। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ হয়ে পড়েছে নিস্তেজ। শোনা যাচ্ছে, মন্দার পদধ্বনি। তৃতীয় ইঞ্জিন চীনেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারে বিশাল পতন ঘটেছে। মন্দার সম্ভাবনা আর মূল্যস্টম্ফীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে খাদ্যপণ্যের সরবরাহে অনিশ্চয়তা এবং খাদ্য সংকটের আশঙ্কা। ইউক্রেন থেকে খাদ্যবাহী জাহাজ চলাচলে অনিশ্চয়তা চলমান থাকাতে এ আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে।

এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে চ্যালেঞ্জ এখন বিশাল এবং বহুমুখী। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যে অবনতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নিম্নগতি এবং বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা আর অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্টম্ফীতির চাপ। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা হয়ে পড়েছে দুরূহ।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তার জন্য বাংলাদেশের সরকার দ্বারস্থ হয়েছে আইএমএফের। আশা এই যে, ঋণ পেলে বৈদেশিক অঙ্গনের সমস্যাগুলোকে ঠেকা দেওয়া যাবে। কিন্তু সংস্থাটির ঋণের সঙ্গে যেসব শর্ত আসবে, সেগুলো মানতে গিয়ে আবার নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে কিনা, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল; এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, সংস্কারের অংশ হিসেবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোর (এর অর্থ হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি করা)।

খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সমস্ত সংকট দূরীকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্ভাব্য কী কী পদক্ষেপ নিলে বাজারের দামকে প্রভাবিত করা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তা দেখতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে