নারীর সম্মান কোথায়

রিতু পারভী | শনিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে চলছে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতার এক চরম সংকটকালীন মুহূর্ত। দুই বছরের বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী অতিমারীর যে প্রভাব তা সমাজের শেকড়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। আছে পরাক্রমশালী ধনতন্ত্রের একচ্ছত্র আধিপত্য, অকার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই অস্থিরতা শুরু হয়েছে আরও কয়েক যুগ আগে থেকেই। উপরিভাগ পরিবর্তনে চোখ ধাঁধাঁনো যাপন মানুষকে ভেতরের কালো শূন্যতা দেখতে দেয়নি। মানুষের চিন্তার জগতে এসেছে পরিবর্তনের ঢেউ। সামগ্রিক অস্থিরতা তাদের ঠেলে দিয়েছে দৈববাদের দিকে। বিশেষ করে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মাঝে এই প্রবণতা প্রকট।

বিশ্বগ্রাম, অবাধ তথ্য প্রবাহ আর বাক স্বাধীনতা চর্চার এই চরমতম মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার মিশেলে মানুষ হতবিহ্বল, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম। তাদের দেখা যায় একদিকে প্রযুক্তি নির্ভর বিলাসি জীবনের প্রতি প্রবল আকর্ষণ সাথে সাথে ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। তবে ধর্মীয় জীবনে যে যাপনের কথা বলা হয় তাকে পাশ কাটিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে যেখানে নিজের লাভ সেটুকু চর্চায় ব্যস্ত বেশিরভাগ মানুষ। নারীদের দমিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে ব্যবহারের সেই আদি চর্চাকেই এইসব মানুষ ধর্মের মূল চর্চা মনে করে। যার প্রতিফলন আমাদের সমাজে এখন সুস্পষ্ট।

সমাজের স্তরে স্তরে যে অনিয়ম, অন্যায়, দুর্নীতি তা নিশ্চয় কোন ধর্মের শিক্ষা নয়। দিন দিন ধর্ম চর্চায় মানুষ অনেক বেশি উৎসাহী হয়ে উঠছে সাথে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায়, দুর্নীতির চর্চাও বাড়ছে সমানভাবে। এটা তো হবার কথা নয়। একজন ধার্মিক মানুষের দুর্নীতি করার কথা নয় অথচ এই দুর্নীতি পঙ্গু করে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে কোথাও একটা ফারাক রয়ে গেছে। সেই জায়গাটা খুব স্পষ্ট। ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা আলোচনায় আসে কেবলমাত্র নারীর জীবনকে, তাঁর যাপনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রেক্ষিতে। আমরা ভোগের জীবন থেকে সরে আসতে পারছি না কিন্তু নারীর জীবন নিয়ে ধর্মীয় শাসন ঠিকই জারি রেখেছি। নারীর সম্মান মানেই নারীকে দৃষ্টির আড়ালে রাখা। নারী লোকচক্ষুর সামনে এলে তাদের অসম্মান করাই যেনো ধর্মীয় আদেশ, অনেক মানুষের চিন্তায় এটা প্রথিত। এই ধরনের মানুষের সংখ্যা যেনো বাড়ছে।

নারীরা তাদের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করে এগিয়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের চন্দ্র অভিযান সাফল্যের পেছনে নারীদের ভূমিকা ভীষণভাবে আলোচনায় আসে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন সংক্ষেপে ইসরোর এই অভিযানে যুক্ত ছিলেন ৫৪ জন নারী প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানী। এই নারীরা তাঁদের মেধা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। এই অভিযানের সম্মুখ ভাগে কাজ করেছেন সাতজন মেধাবী নারী। এএক অসামান্য ঘটনা যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক জরুরি বার্তা দেয়। নারীকে ঘরে অবরুদ্ধ করে কল্যাণের কোন কাজ করা সম্ভব নয় তাপুরুষতান্ত্রিক এই সমাজের মেনে নেয়ার সময় এটা। সকল কল্যাণের কাজ সাফল্যের সাথে বাধাহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারে নারী এবং পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতায়।

সাম্প্রতিক ডেইলি স্টারের এক রিপোর্টে দেখা যায় জাতিসংঘের জেন্ডার সোশ্যাল নর্ম ইনডেক্স যা জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃক তৈরি সেখানে বাংলাদেশের ৯৯ ভাগেরও বেশি মানুষ নারীদের ব্যাপারে পক্ষপাতদুষ্ট। বহুদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত ধারণায় নারীর ক্ষমতা, দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রশ্ন নিয়ে সামনে দাঁড়ায় এই পক্ষপাতিত্ব। এর ফলে যখন সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়ে তখন জাতিসংঘের এই জরিপ রিপোর্ট শংকা তৈরি করে বটে!

সামাজিক, অর্থনৈতিক সংকটকালীন এই সময়কে উত্তীর্ণ হতে হলে সংকীর্ণতাকে উতরে মূল জায়গাগুলো পুনর্গঠনে হাত দেয়া জরুরি। আর অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হলে নারীকে অবরুদ্ধ করার প্রশ্নই আসে না, সে শারীরিক হোক কিংবা মানসিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে চোলাই মদসহ দুইজন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে অজগর সাপ অবমুক্ত