নারীর মোবাইলে কলের সূত্র ধরে ‘খুনির’ সন্ধান

নেত্রকোণা থেকে গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ মার্চ, ২০২২ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

লৌমহর্ষক একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব। মাথায় উপর্যপুরি ইট দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয় এক নারীকে। লাশের পাশে বসে সিগারেট খায় অভিযুক্ত যুবক। জ্বলন্ত সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে নারীর শরীরে। আগুন ধরে যায় পোশাকে। লাশটি প্রায় পুড়ে বিকৃত হয়ে যায়। লাশ সেখানে রেখেই অভিযুক্ত যুবক রাঙামাটি থেকে চলে যায় নেত্রকোণা। খুন হওয়া নারীর পরিবার কিংবা পুলিশ কারও সন্দেহের তালিকায় ছিল না ওই যুবক। নারীর মোবাইলে কলের সূত্র ধরে র‌্যাব পেয়ে যায় ‘খুনির’ সন্ধান। গত শনিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় নেত্রকোণা
জেলার মদন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের একটি টিম। যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে লৌমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বেরিয়ে আসে বলে জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ। নিহত হাছিনা বেগম সুমি (২৮) রাঙামাটি জেলা সদরের দোভাষী বাজার এলাকায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন। আর অভিযুক্ত মাহিবুর কামাল (২৩) রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার মুরগির টিলা এলাকার মনির ভান্ডারির ছেলে।
র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্প কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আজাদীকে জানান, গত ১১ মার্চ রাতে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটে ওই নারীকে খুন করা হয়। পরদিন বিকেলে টয়লেটের ভেতর থেকে নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। খুনের শিকার সুমির সঙ্গে তার স্বামীর একবছর আগে ছাড়াছাড়ি হয়। সুমি এলাকায় মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। মাহিবুর ইয়াবা আসক্ত। ইয়াবা কেনাবেচার সূত্রে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। একবছর ধরে তারা ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে। ১৮ মার্চ মাহিবুরের অন্য এক নারীর সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল। ১১ মার্চ সেটা জানতে পেরে সুমি তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। স্কুলের পরিত্যক্ত টয়লেটে দু’জন এ বিষয়ে কথা বলার সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে মাহিবুর তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করলে সুমি লুটিয়ে পড়ে। এরপর আরও ১৫ থেকে ২০ বার তার মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মাহিবুর। এরপর লাশ পাশে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় একটি সিগারেট খায় মাহিবুর। পরে সেই সিগারেটের জ্বলন্ত ভগ্নাংশ সুমির পোশাকের ওপর ফেললে আগুন ধরে যায়। আগুনে সুমির শরীরের প্রায় অর্ধেক এবং মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যায়। র‌্যাব কর্মকর্তা মাহফুজ জানান, মাহিবুর পুরো ঘটনা একেবারে সিনেমার মতো করে আমাদের সামনে বর্ণনা করেছে।
র‌্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর আরও জানান, লাশ উদ্ধারের পর সুমির মা তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন। তবে সেই মামলায় মাহিবুরের নাম ছিল না। ছায়া তদন্তে নেমে র‌্যাব সুমির মোবাইলে তাদের দু’জনের ছবি পায়। এরপর কললিস্ট বের করলে দেখা যায়, ১১ মার্চ দুপুর থেকে মাহিবুর ও সুমি একাধিকবার কথা বলেছে। কল রেকর্ডে দু’জনের কথোপকথনও পায় র‌্যাব। এরপর তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআটকে আছে চাক্তাইসহ ১৮ খালের কাজ
পরবর্তী নিবন্ধনগর জুড়ে তীব্র যানজট