নারীর প্রতি সম্মান

মিতা দাশ | শনিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

একটা দোকানে বাজার করতে ঢুকে শুনতে পেলাম দোকানের মালিক গালি দিচ্ছে তার স্ত্রীকে খুব বাজে ভাষায় মোবাইল ফোনে। ফোন রেখে আরেকজন ভাইকে বললো, মেয়েমানুষগুলোকে লাই দিলেই মাথায় চড়ে বসে, এদের আসলে ঠেঙ্গিয়ে রাখা উচিত।
শিক্ষিত মানুষ হিসেবে আমার খুব খারাপ লাগলো কথাগুলো শুনতে। কিছু বলতে ইচ্ছে করছিলো আমার। তবু দ্বিধার মধ্যে ছিলাম বলবো কি বলবো না। এমন সময় দেখলাম আরেকটা কল আসছে ঐ দোকানদারের। এবার শুনতে পেলাম মেয়ের জামাইকে গালি দিচ্ছে মেয়েকে মেরে বাপের বাড়িতে পাঠালো কেন সেজন্য। মেয়ে জামাইকে হারামজাদা থেকে শুরু করে আরও অনেক গালি দিয়ে গেলো।
আমার বাজার করা শেষে দোকান মালিককে টাকা দিতে দিতে বললাম, মেয়েকে জামাই মেরেছে বলে আপনি গালি দিচ্ছেন আর আপনি এতক্ষণ মেয়ের মা’কে যে গালি দিলেন তারবেলায়?
উত্তরের অপেক্ষা না করে বের হয়ে গেলাম। এখন ঐ দোকানদারের যদি কোন সামান্য জ্ঞান থেকে থাকে তাহলে সে বুঝতে পারবে নিজের স্ত্রীকে সম্মান না করলে নিজের মেয়েও কখনো সম্মান পাবে না।
সমাজে এরা নিম্নশ্রেণির লোক তাই হয়তো পরিবার থেকে সম্মান দেয়া শেখেনি, কিন্তু শিক্ষিত পরিবারগুলো? বা বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও যে নারীরা অবহেলিত সেখানে কে শেখাবে নারীদের প্রকৃত সম্মান না দিলে সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়া সম্ভব নয়!
সকল পুরুষ তাদের মা’কে ভালোবাসে, নিজের মেয়েকে ভালোবাসে, প্রতিটি ভাই তার বোনকে ভালোবাসে কিন্তু বাইরের মেয়েদের বা স্ত্রীদের কে সম্মান দেয়ার কথাগুলো ভাবে না।
কাউকে সম্মান দিলে নিজেও যে সম্মানিত হন এটা অনেকেই বুঝে না। কাজের প্রয়োজনে মিষ্টি ভাষায় কথা আর কাজ ফুরালেই নিন্দা–এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। সকল মানুষকে সম্মান করা উচিত। যেখানে ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ কাপে জয় অর্জন করলো, অসাধারণ খেলে। যেখানে এভারেস্ট জয় করলো বাংলাদেশের মেয়ে নিশাত ফারজানা সেখানে এখনো কেন পুরুষরা নিজেকে বড় করে দেখে, আর মেয়েদের কাজগুলোকে ছোট করে দেখে, কেন মেয়েদের সম্মান দিতে পারে না আমার ঠিক বোধগম্য হয় না।
সবচেয়ে বড় সত্যি হলো, সকল কাজে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে ইদানীং। সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে সকল ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারবে নারীরা।
নারীরা দশভুজা। তারা একসাথে অনেকগুলো কাজ সামলান দুই হাতে। একজন পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি ঠান্ডা মাথায় কাজও করে থাকেন। পুরুষদের কাজের প্রেরণা, শক্তি, সাহস, ও উৎসাহ ও জুগিয়ে থাকেন নারী।
কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়, পুরুষেরা নারীদের উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেন, নারীরাও নিরবে সব করেন বটে তবে এতে পুরুষদের প্রতি একটা খারাপ মনোভাব ঠিকই তৈরি হয়। কর্মে, সংসারে, সম্পর্কে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ও সম্মান প্রদর্শিত হোক নারীর প্রতি। সুন্দর সমাজ, সুশৃঙ্খল জাতি, আগামী ভবিষ্যৎ সবই হতে পারে সুন্দর যদি নারী পুরুষের সমান অধিকার ও সম্মান বজায় থাকে।
এছাড়াও শিশুদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন সকলের প্রতি সমান মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেবী পূজ্য, নারী ত্যাজ্য?
পরবর্তী নিবন্ধশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবীর (দ.) আদর্শ অনুশীলনের বিকল্প নেই