নারীর নিজের সচেতনতায় শান্তি আসবে

রোকসানা বন্যা | শনিবার , ২১ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বিষণ্ন দিনটার হিসেবনিকেশ করতে গিয়ে ভাবি মানুষের একটা গোটা দিন কিছুতেই খারাপ যেতে পারে না। তবুও খারাপ হয়, বিষণ্ন থাকি। কিচ্ছুটি ভালো লাগে না। এখন একা থাকা বা ঘরে মানুষ থাকা একই। নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করে অনেকে।

আর এই আমরা যারা কথা বলতে, মানুষ দেখতে পছন্দ করি তারা খুব অসহায় বোধ করি। আর তখনই ‘কিছুই ভালো লাগছে না’ পেয়ে বসে। অথচ আমাদের শৈশবে ভালো নেই শব্দটাই শুনতে পেতাম কম। খুব অসুখ না করলে এটা শোনা যেতো না।

এই পঞ্চাশোর্ধ বয়সে এসে জুলেখা কিছুতেই স্থির থাকতে পারছে না। সবসময়ে কেমন যেন লাগছে। মন এলোমেলো। ভুলে যাওয়া এখন হরহামেশাই চলছে। জুলেখার বর বেশ কয়েকবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। ডাক্তার ওষুধ দেন। খেয়েও কোনো উপকার হচ্ছে না। কেমন মনমরা থাকে প্রায় সময়ে। কারো সাথে কথা বলতে গেলে অকারণে কান্না পেয়ে বসে জুলেখার। সংসারের শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। ঘরের সবাই বিরক্ত হয়ে পড়ছে। যেখানে ডাক্তার বলছে কিছুই না তবুও কেন জুলেখার চেহারায় বিষণ্নতার ছাপ।

এটা শুধু একজন জুলেখার কাহিনী নয়। পঞ্চাশ পেরোনো প্রায় নারীর এই সমস্যা দেখা দেয় একাকীত্বের কারণে। এই বয়সটাতে হরমোনের সমস্যা চলে। মেনোপোজের কারণে একজন নারী অসহায় হয়ে পড়ে। তার শরীরের উপর বয়ে যায় নানানরকম অশান্তি। হরমোন পরিবর্তনের ফলে এমনটা হয়।

ত্রিশ বছরের দাম্পত্যজীবন বেশ সুখেরই ছিল জুলেখার। ব্যবসায়ী স্বামী অভাব রাখেননি কিছুর। দু’সন্তানের জননী। সবকিছু গুছিয়ে সংসার করেছেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন বছরখানেক তাঁর কিচ্ছু ভালো লাগছে না। সবকিছুতে কেমন যেন বিরক্তি। শরীরে আগের সেই প্রফুল্লতা নেই। যে প্রিয় মানুষটির জন্য একসময় অপেক্ষায় প্রহর কাটাতেন তাকেও আজ সহ্য হয় না বেশিক্ষণ। এই গল্প একজন জুলেখার হলেও প্রায় নারীকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

প্রায় বললাম এই কারণে যারা যৌথ পরিবারে থাকেন, অথবা বাইরে যারা কাজ করেন তাদের এই সমস্যা অনেকটা কম। তাদের ব্যস্ততায় অনুভব করার সুযোগ নেই এইসব। আমাদের মা, চাচি, ফুফুদের মধ্যে এই সমস্যা দেখতে পাইনি আমরা। কারণ তারা যৌথ পরিবারে থেকেছে, তাদের কাজের ফুরসত হতো না। সময় পেলে আড্ডায়, গল্প জুড়তো। মানসিক শান্তি থাকতো বেশি। পরিবারের সবার মন জয় করাতে ব্যস্ত থাকতে হতো। নিজের কথা ভাববার, নিজের খেয়াল রাখার সময় পেতো না।

এখন আমরা যৌথ পরিবার ভেঙে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে আলাদা সংসার গড়ছি। এই বয়ঃসন্ধিতে এসে দেখতে পাই ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে যে যার মতো ক্যারিয়ার গড়ার পিছনে দৌড়াচ্ছে। অস্থির সময় পার করছে তারা। পরিবারকে সময় দেয়ার সুযোগ নেই তাদের। এই একাকী সময়টাতে, মেনোপজের কারণে প্রায় নারী অসহায়বোধ করে।

আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ঋতুচক্র ৪৮/ ৫২ বছরের মধ্যে বন্ধ হতে পারে। নারীর একটা বয়সে ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই সময়কে বলে মেনোপোজ। এই মেনোপোজ চলাকালীন বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

নারীর দেহে Estrogen & progesterone নামের দুই হরমোনের প্রভাবেই period cycle চলতে থাকে। ৪০ থেকে ৪৫ বয়সের পরে Estrogen ক্ষরণ কমতে থাকে। যার ফলে কমতে থাকে ঋতুস্রাবের পরিমাণ। এই সময়ে নারীর শরীরে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণের মাধ্যমে বুঝতে পারে যে মেনোপোজ আসছে। পরিবর্তনটা দেখা যায় মেনোপোজ শুরু হবার আরও আগে থেকে। এই পরিবর্তনকে বলা হয় প্রি মেনোপোজ।

যেমন: Irregularl menstruation, Insomnia weight gain Fatigue, Anxiety libido , তা ছাড়াও চোখ , মুখ, চামড়ার শুষ্কতাও দেখা দিতে পারে। মেনোপোজের সবচেয়ে প্রচলিত লক্ষণ হলো Hot Flash। আকস্মিকভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে উল্কার মতন গরম অনুভূত হওয়া, রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং ঘাম হওয়া। ডিপ্রেশন বা অবসাদ দেখা দেয়া। মেজাজ খিটখিটে হওয়া। অস্থিরতা বা পালপিটিশন বেড়ে যাওয়া। খুব সহজে হাঁপিয়ে ওঠা এবং ক্লান্তি ভর করা। এইসব উপসর্গে তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমার সব শেষ হয়ে গেল ভেবে।

সারাজীবন মেয়েরা পরিবারের বাইরে নিজের খেয়াল রাখার কথা ভুলে যান। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না। কিন্তু এই সময়ে নিজের যত্নের প্রয়োজন খুব। এই পরিবর্তনের ফলে নারীর হাড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ক্যালসিয়াম কমের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। মেনোপোজের শারীরিক উপসর্গগুলো বেশ অস্বস্তিকর। মনের ওপর প্রভাব ফেলে বেশি। অনেকে মেনে নিতে পারেন না এই সমস্যাগুলো। তাই হুটহাট রেগে যাওয়া, হতাশ হওয়া, মাথা ব্যথা, ঝিমানি ভাব থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পরিবারের সহযোগিতা সবচেয়ে জরুরি। পরিবার তার মনের অবস্থা বুঝে তার সাথে গল্প, আড্ডা, কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া খুব প্রয়োজন। এই সময়ে মেয়েদের নিজেদের সচেতন হতে হবে বেশি। নিজের খেয়াল নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি নিজের কর্মজগতে বিভিন্নভাবে নিজেকে কাজে যুক্ত রাখা। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা। ভাবতে হবে মেনোপোজ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এটি হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

নারীর নিজের সচেতনতাই এনে দিতে পারে শান্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাজায় জুটছে মাথাপিছু মাত্র ৩ লিটার পানি
পরবর্তী নিবন্ধহায় আনারকলি!