নব উদ্যমে আজাদী এগিয়ে চলুক শতবর্ষের সাফল্যখচিত তোরণের দিকে

ড. মাহবুবুল হক | মঙ্গলবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

আজাদীর সঙ্গে আমার প্রথম যোগাযোগ ১৯৬৫ সালে। সে বছর ভারতপাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিল। সে যুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাশখন্দ চুক্তির মাধ্যমে। আমি তখন চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ি। কলরোল নামে দ্বিমাসিক পত্রিকা প্রকাশ, লেখালেখি, বিতর্ক, ছায়ানাট্য ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কাজের সূত্রে তখন আমি কলেজে বেশ পরিচিতি পেয়ে গেছি। স্নেহধন্য হয়েছি তখনকার ছাত্রনেতা ও দৈনিক আজাদীর কিশোর পাতা ‘আগামীদের আসরে’র পরিচালক আবুল কাসেম সন্দ্বীপের। তাঁরই প্রেরণায় আগামীদের আসরে সে সময়ে আমার দুএকটা লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কাসেম ভাইয়ের সঙ্গেই একদিন আমি আজাদী অফিসে গিয়েছিলাম। তখন সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। সেদিন তাঁর মতো একজন সদালাপী, স্নেহবৎসল ও উৎসাহদাতা মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে আমার জীবন ধন্য হয়েছিল।

অধ্যাপক খালেদ সবসময় নবীন লেখকদের উৎসাহিত করতেন। দৈনিক আজাদীর পাতায় নতুন নতুন লেখা ছাপাবার সুযোগ করে দিতেন। তাঁর উৎসাহে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আজাদীর পাতায় ‘বেতাল উপাখ্যান’ নামে আমার লেখা রঙ্গব্যঙ্গ ও সমালোচনাধর্মী কলাম প্রকাশিত হতে শুরু করে। অবশ্য কয়েক সংখ্যার পর ঐ কলামের প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত আমার লেখায় সরকারি কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যঙ্গাত্মক সমালোচনা ছিল। আয়ুব খানের সেই সামরিক শাসনামলে এ ধরনের লেখা ছাপা নিশ্চয়ই পত্রিকার জন্যে অনুকূল ছিল না।

আজাদী তখন ছাপা হতো আন্দরকিল্লায় অবস্থিত কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসে, ফ্ল্যাট মেশিনে। আজাদীর অফিসও তখন ছিল ঐ প্রেসের দোতলায়। এই প্রেস ও পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বর্তমান সম্পাদক আবদুল মালেকের পিতা মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার। পিতার মৃত্যুর পর মালেক ভাই (এম এ মালেক) হয়েছেন আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক এবং এই প্রেসের মালিক।

কোহিনূর প্রেসে তখন রাতে পত্রিকা ছাপা হতো আর দিনে চলত সাধারণ মুদ্রণের কাজ। এসব কাজ দেখাশোনা করতেন লোকমান ভাই (লোকমান হাকিম চৌধুরী)। তিনি খুবই মিশুক ধরনের লোক। কোহিনূর প্রেসে আমি মালেক ভাই ও লোকমান ভাইয়ের অসাধারণ আনুকূল্য পেয়েছি। পরে আমার সম্পাদিত চট্টগ্রাম কলেজ বার্ষিকী অন্বেষা, একুশের সংকলন পদাতিক, রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত সংকলন রবিকরে কবিকণ্ঠ ও রবিকণ্ঠ ইত্যাদি এই কোহিনূ্‌র প্রেস থেকেই ছাপা হয়। তখন দেখেছি, লোকমান ভাইয়ের এখানে একটু না বসে এবং একটু চা না খেয়ে অধ্যাপক খালেদ দোতলায় আজাদী অফিসে উঠতেন না। সে সময়ে আজাদী অফিসে তো বটেই, এই প্রেসেও তখনকার অনেক ছাত্র নেতার যাতায়াত ছিল। রাজনৈতিক পুস্তিকা, প্রচারপত্র, পোস্টার ইত্যাদি ছাপার ব্যাপারে কোহিনূর প্রেসের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা। ১৯৫২ সালে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সাড়াজাগানো একুশের কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। এজন্যে ছাপাখানার লোকজন শিকার হয়েছিল পুলিশি তৎপরতার ।

সে সময়ে অধ্যাপক খালেদ পত্রিকা সম্পাদনার সব দিক সামলাতেন। আর মালেক ভাই ছিলেন পরিচালনা সম্পাদক। তিনি যে কেবল নামেমাত্র পরিচালনা সম্পাদক ছিলেন, এমন নয়। তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়েছিলেন। আজাদী হয়ে উঠেছিল তাঁর তাত্ত্বিক জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগের পরীক্ষাক্ষেত্র। তিনি নিয়মিত আজাদীর প্রকাশনা সংক্রান্ত সব কাজ দেখতেন। বিশেষ করে বিজ্ঞাপন ও আর্থিক বিষয় দেখাশোনার ভার নিজের হাতেই রেখেছিলেন।

তখন আজাদীতে যাঁরা সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন তাঁদের মধ্যে সাধনকুমার ধর, কাজী জাফরুল ইসলাম, বিমলেন্দু বড়ুয়া, শরীফ রাজা, ওবায়দুল হক, মোহাম্মদ ইউসুফ, মাহবুব উল আলম প্রমুখকে আমি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পেয়েছি। এঁরা প্রত্যেকেই সৎ, সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক। পেশাদারি দক্ষতায়ও এঁরা চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার জগতে আমাদের কালের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। এঁদের মধ্যে সাধনদা, বিমলদা, শরীফ রাজাকে আমরা অকালে হারিয়েছি। সাধনদা ছিলেন ভারিক্কি স্বভাবের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত রসিক। জাফর ভাই সাংবাদিকতার পাশাপাশি গবেষণা ও লেখালেখিতে ছিলেন সনিষ্ঠ। বিমলদা সাংবাদিকতা ও লেখালেখির পাশাপাশি একসময় আজাদীর সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে অরুণ দাশগুপ্ত সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। শরীফ রাজার লেখা দেশ দেশান্তর কলাম ছিল খুবই জনপ্রিয়। সদাহাস্য ইউসুফ ভাই কীএকটা ঘটনায় আজাদী ছাড়ার আগ পর্যন্ত কোমল মাধুর্যে সকলকে মুগ্ধ করে রাখতেন। স্বল্পভাষী মাহবুব ভাই কেবল কলাম লেখেন নি, কবিতার অলঙ্কারে তাঁর রচনাকে সাজিয়েও আনন্দ পেয়েছেন। এর পরে আজাদীতে সক্রিয় ছিলেন অগ্রজপ্রতিম সুখেন্দু ভট্টাচার্য, আমার সহপাঠী কাযী আযিয উদ্দিন আহমদ, স্নেহভাজন আতাউল হাকিম, বন্ধু নাসিরুল হক ও সুহৃদ হেলালউদ্দীন চৌধুরী। এঁেদর মধ্যে প্রথম তিনজন অকালপ্রয়াত, অন্যরা আজাদী ছেড়ে চলে গেলেও সাংবাদিকতা ছাড়েন নি।

দৈনিক আজাদীর কাছে আমার ব্যক্তিগত ঋণ অনেক। দৈনিক আজাদী কেবল আমাকে লেখালেখির জগতে প্রণোদিত করে নি, আমার নানা লেখালেখিতেও সহায়তা করেছে। ১৯৭৯ সালে আমার প্রথম বই মাক্সিম গোর্কির মা ছাপা হয়েছিল কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসে এবং এর প্রকাশনা উৎসব আয়োজনের পেছনে ছিল মালেক ভাইয়ের প্রেরণা ও সহযোগিতা। বাংলা বানানের নিয়ম নামে আমার যে বইটি যুগপৎ বাংলাদেশ ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তা ফটো টাইপ সেটিংএ কম্পোজ করার কাজটি দৈনিক আজাদী অফিসে সম্পন্ন করার ব্যবস্থাও করেছিলেন মালেক ভাই। দক্ষ অক্ষরবিন্যাসক শহীদুল্লার নেতৃত্বে এ বইয়ের কম্পোজের কাজ চলেছিল বেশ কিছুদিন ধরে। তা করা হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থায় আজাদী অফিস খোলার নির্ধারিত সময়ের আগে এবং সরকারি ছুটির দিনে। এ আনুকূল্য অভাবনীয়। শুধু তাই নয়, আমার পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভের পর দৈনিক আজাদী বিশেষ অনুষ্ঠান করে আমাকে সংবর্ধনা জানিয়েছিল। এমনি আরও অনেক উদাহরণ টানা যাবে। দৈনিক আজাদী তথা অধ্যাপক খালেদ ও মালেক ভাইয়ের এ বদান্যতা আমি কখনো ভুলতে পারবো না।

আমি স্বভাবতই কম লিখি। ফলে পত্রপত্রিকায় আমার লেখা বের হয় না বললেই চলে। এ পর্যন্ত যাকিছু লেখা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তার সবই প্রায় অনুরুদ্ধ হয়ে লেখা এবং সত্যি বলতে কী তার বেশির ভাগই প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। আবার যে ধরনের লেখা আজাদী প্রকাশ করার কথা নয়, সে ক্ষেত্রেও আমি আনুকূল্য পেয়েছি। দৈনিক পত্রিকা সাধারণত ধারাবাহিক রচনা প্রকাশ করতে চায় না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে আজাদী ব্যতিক্রম করেছে। লিয়েফ তলস্তোয়ের উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ রজত রাত্রি ধারাবাহিকভাবে আজাদীতে প্রকাশ করতে অরুণ দা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা দেখান নি। ভেবেছিলাম রজত রাত্রি তো উপন্যাস তাই হয়তো সেটি ছাপতে অরুণদার অমত ছিল না। কিন্তু নজরুলের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে আমার লেখা নজরুল তারিখ অভিধানও দৈনিক আজাদী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছে। এটি বিস্ময়কর নয় কি! সেই লেখাটি এক দশক পরে বই আকারে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৮৭ সালের দিকে দৈনিক আজাদী আমার নৈমিত্তিক যোগাযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। তখন মালেক ভাই আজাদী পত্রিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা ভাবছিলেন। আমার মনে হয়েছিল, আমি যদি অধ্যাপনা ছেড়ে আজাদী পত্রিকায় যোগ দিতাম তাহলে বোধ হয় তিনি খুব খুশি হতেন। কিন্তু তখন আমি আমার গবেষণার কাজ শেষ করার কথা ভাবছিলাম। মালেক ভাই মুদ্রণ প্রযুক্তির দিক থেকে পত্রিকাকে আধুনিক করার কাজ নিয়তই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ জন্যে ছেলে ওয়াহিদকে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ে লেখাপড়া করার জন্যে।

১৯৬০এ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেব যখন আজাদী প্রকাশ করেন তখন তা ছাপা হতো বিচল হরফে অক্ষর বিন্যাস করে। মালেক ভাই ১৯৬৪র দিকে স্বয়ংক্রিয় নতুন অক্ষর বিন্যাস পদ্ধতি মনোটাইপে পত্রিকা ছাপানোর কাজ অংশত শুরু করেন। অংশত শুরু করার কারণ, নতুন প্রযুক্তি হঠাৎ করে পুরো প্রবর্তন করলে অনেক অক্ষর বিন্যাসক বা কম্পোজিটার বেকার হয়ে পড়ত। ১৯৬৯ সালের দিকে আজাদীতে আসে আরও আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তি। আজাদী ছাপা শুরু হয় সমকালীন সর্বাধুনিক লাইনো টাইপে কম্পোজ করে। আর ১৯৮৮ সালে অক্ষর বিন্যাসের ক্ষেত্রে আজাদীতে চালু হয় আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পিটিএস বা ফটো টাইপ সেটিং। এর পরের দুই দশকে আজাদীর পৃষ্ঠাবিন্যাস ও প্রসেসিং ব্যবস্থা প্রায় স্বয়ংক্রিয় হয়ে গেছে। আর মুদ্রণের ক্ষেত্রেও ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ষাটের দশকের ফ্ল্যাট মেশিন থেকে স্বয়ংক্রিয় অফসেট মেশিন হয়ে ইতোমধ্যেই আজাদী প্রবেশ করেছে রোল কাগজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার রঙা মেটার যুগপৎ ছেপে ও ভাঁজ করে লাখ লাখ কপি বের করার অবস্থায়। ২০২১ সালে আজাদীতে চালু হয়েছে স্বয়ংক্রিয় প্রসেসিং ব্যবস্থা – ‘সিটিপি’ বা কম্পিউটার টু প্লেট।

যাই হোক, আবার আগের কথায় ফিরে আসি। মুদ্রণ প্রযুক্তির দিক থেকে আজাদী পত্রিকাকে আরও আধুনিক ও উন্নত করা এবং সাংবাদিকতার মান বাড়ানোর পাশাপাশি আজাদীতে তখন নতুন নতুন নানা বিষয়ে আলাদা আলাদা পাতা বের করা শুরু হয়। মালেক ভাই তখন আমাকে আজাদীর সঙ্গে যুক্ত করায় উৎসাহী ছিলেন। আমার গবেষণার ফাঁকে ফাঁকে আজাদীর জন্যে কিছু করতে পারলে আমার ভালো লাগবে এই বিষয়টি মালেক ভাইকে খোলাখুলি জানিয়ে ‘আজাদী ফিচার’ নামে নিয়মিত ফিচার প্রকাশের প্রস্তাব দেই। তিনি সানন্দে রাজি হন। এর পর বছর দুয়েক নিয়মিত ‘আজাদী ফিচার’ প্রকাশিত হয়েছে। ড. আবদুল করিমসহ অনেকেই সে সময়ে এর প্রশংসা করেছেন। তবু মনে হয়, কেউ না কেউ হয়তো এর বিরুদ্ধে মালেক ভাইকে বুঝিয়ে থাকবেন কিংবা ফিচারগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে মানসম্মত মনে হয় নি। এর ফলে আজাদী ফিচার প্রকাশ এক সময় বন্ধ হয়ে যায়।

ফিচার লেখার সূত্রে অনেক নতুন নতুন লেখক সে সময়ে আজাদীর পাতায় হাজির হয়েছিলেন। আমি নিজেও অনেক বরেণ্য শিল্পীসাহিত্যিকবিজ্ঞানীর জীবনকথা লেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার সেসব লেখা ২০১০এ একুশের বইমেলায় কৃতীজন কৃতিকথা নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে এবং বইটি আমি উৎসর্গ করেছি আজাদীর পরম শুভানুধ্যায়ী অকালপ্রয়াত রম্যলেখক অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হককে।

জহুর ভাই আজাদীতে বিভিন্ন সময়ে দুটো কলাম লিখেছেন : ‘সদয় অবগতির জন্যে’ ও ‘রঙ্গব্যঙ্গ’। পরে নিয়মিত লিখতেন ‘কৌতুক কণিকা’। এক সময় বামপন্থি রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন আহমদ আজাদীতে ‘পথ চলিতে’ কলাম লিখেছেন। তাঁর উজান স্রোতে জীবনের ভেলা ও ধারাবাহিকভাবে আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এ রকম কয়েকজনের কথা মনে পড়ছে যাঁরা আজাদীতে কলাম লিখেছেন কিন্তু এখন বেঁচে নেই। সাংবাদিক শরীফ রাজার কলাম ছিল ‘দেশ দেশান্তর’, আমার শিক্ষক কবি ওহীদুল আলম লিখতেন ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’, মোফাচ্ছেল আহমদ চৌধুরী লিখতেন ‘অন্তহীন ভাবনা’, ব্যাংকার ও রম্যলেখক মোহাম্মদ ইদ্রিস লিখতেন ‘বিচরণ’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকের উল্লাহ লিখতেন ‘বিচিত্র সংবাদ’। আজ সেসব কেবল স্মৃতি হয়ে আছে।

বিগত দিনগুলোতে ও বর্তমানে আজাদীতে প্রকাশিত বিভিন্ন কলামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : এ কে এম সাদ উল্লাহর ‘রং তুলি ক্যানভাস’, প্রকৌশলী এল কে সিদ্দিকীর ‘আরশী নগর’, . রবীন্দ্রনাথ শীলের ‘বিজ্ঞান বিচিত্রা’, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খানের (ইবনে সাজ্জাদ) ‘বিরস রচনা’, মাহবুব উল আলমের ‘লোকে বলে বলে রে…’, অধ্যাপক ফজলুল হকের ‘বহমান সময়’, নুরুল ইসলাম বিএসসির ‘একান্ত ভাবনা’, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের ‘ঢাকার চিঠি’, সাখাওয়াত হোসেন মজনুর ‘সামপ্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি’, অধ্যক্ষ শায়েস্তা খানের ‘দেখা শোনা ভাবা’, ডা. কিউ এম অহিদুল আলমের ‘ভূগোলের গোল’। বেলাল মোহাম্মদও (বেতার ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক) একসময় আজাদীতে কাব্যবচন লিখতেন।

মালেক ভাইও এক সময় কলাম লিখেছেন ‘চোখে দেখা কানে শোনা’ শিরোনামে। কলামটি ছিল ব্যঙ্গরসাত্মক। এ কলামটি ‘উলটো থেকে’ নামে বই আকারে বের হয় এবং দ্রুত এর সব কপি নিঃশেষ হয়ে যায়। জহুর ভাই ও নুরুল ইসলাম বিএসসির কলামগুলিও বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ওবায়দুল হকের বার্লিন প্রবাসে, নাসিরুল হকের পেরেস্ত্রৈইকার দেশে ও সাখাওয়াত হোসেন মজনুর রণাঙ্গণে সূর্যসেনিক বই আকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে আজাদীতে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিল। প্রয়াত চট্টলতত্ত্ববিদ আবদুল হক চৌধুরীর প্রায় সব লেখাও আজাদীতে প্রকাশিত হওয়ার পর বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আজাদীর অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সাহিত্যের পাতা ‘সাহিত্য সাময়িকী’ আলাদা গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। বিশেষ করে অরুণ দাশ গুপ্ত এ পাতার দায়িত্ব নেওয়ার পর। তিনি উদ্যোগী হয়ে এতে অনেক খ্যাতনামা পণ্ডিত, গবেষক ও সাহিত্যিকের লেখা প্রকাশ করেছেন। আজাদীর সাহিত্যপাতা ‘সাহিত্য সাময়িকী’তে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে অন্নদাশঙ্কর রায়, অতুল সুর, ক্ষেত্র গুপ্ত, সুবোধ রায়, সালাউদ্দিন আহমদ, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, মমতাজ উদ্‌দীন আহমদ, সুচরিত চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, হাসনাত আবদুল হাই, হাসান আজিজুল হক প্রমুখ খ্যাতনামা বহু প্রাবন্ধিক, কবি ও গল্পকারের লেখা। চট্টগ্রামের লেখকদের লেখা তো থাকেই। আজাদীর বিভিন্ন পাতায় প্রবীণনবীন কত লেখকলেখিকার লেখা যে ছাপা হয়েছে তা হিসেব করা মুশকিল। বিশেষ করে চট্টগ্রামের নারী লেখকদের জন্যে আজাদীর দুয়ার ছিল সবসময় খোলা।

দৈনিক আজাদীর পঁয়ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে মালেক ভাই একটি আসাধারণ কাজ করেছেন। সেটি হলো হাজার বছরের চট্টগ্রাম নামের সংকলন প্রকাশ। আমার সৌভাগ্য, সেটির সার্বিক পরিকল্পনা ও সম্পাদনার মূল দায়িত্ব মালেক ভাই ও অধ্যাপক খালেদ আমাকে দিয়েছিলেন। আমি আজাদীর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। কিন্তু মালেক ভাই ও অধ্যাপক খালেদ পুরোপুরি স্বাধীনভাবে আমাকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যে বিশেষ সংখ্যাটি আমাদের সম্পাদনা করে প্রকাশ করতে হয়েছিল। সে জন্যে একটা পথমানচিত্র তৈরি করে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা অগ্রসর হই। এই পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল একাধিক বৈঠকে। অধ্যাপক খালেদকে মধ্যমণি করে মালেক ভাই, অরুণ দা, জহুর ভাই ও আমি সে রূপরেখা চূড়ান্ত করি। তারপর কাজে নেমে যাই। সেই কাজের অভিজ্ঞতা আমার জন্যে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও আনন্দের। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠকদের অবদানে এবং প্রশাসনের সহায়তায় হাজার বছরের চট্টগ্রামের ভৌগোলিক পরিচিতি, পুরাকীর্তি, ইতিহাস, প্রশাসনিক দিক, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য, খেলাধুলা ইত্যাদি বিষয়ে একটি তথ্যসমৃদ্ধ সংকলন প্রকাশ করা সম্ভব হয়। এটির প্রকাশক ছিলেন মালেক ভাই, সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক খালেদ, অরুণ দা ছিলেন সহযোগী সম্পাদক। আমি দায়িত্ব পালন করি নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। এ কাজের জন্যে গঠিত সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন মাহবুব হাসান, অধ্যাপক চৌধুরী জহুরুল হক, অধ্যাপক ননীগোপাল চৌধুরী, শামসুল হোসাইন, . মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক ফজলুল হক, . রবীন্দ্রনাথ শীল, . জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও সাংবাদিক সুখেন্দু ভট্টাচার্য। বেশ কয়েক দিন বৈঠক করে লেখাগুলোর মূল্যায়নের কাজে সহায়তা করেন দৈনিক আজাদীর কয়েকজন প্রবীণ সাংবাদিক সাধন ধর, ওবায়দুল হক, বিমলেন্দু বড়ুয়া, কাজী জাফরুল ইসলাম, মাহবুবুল আলম, সমীর ভট্টাচার্য ও সিদ্দিক আহমদ। এ কাজে মনপ্রাণ দিয়ে খেটেছেন অরুণ দা, প্রদীপ দেওয়ানজী, কবি কমলেশ দাশগুপ্ত ও সাংবাদিক সুপ্রিয় রক্ষিত। কম্পিউটারে অক্ষরবিন্যাসের কাজ সুসম্পন্ন হয়েছিল রকিবুল হকের নেতৃত্বে। আর সেসব দেখভালের কাজ করেছিলেন ওয়াহিদ মালেক ও মইনুল আলম বাদল। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন শিল্পী মনসুরউলকরিম। অঙ্গসজ্জার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিল্পী পীযূষ দস্তিদার। এটা প্রকাশের জন্যে আমাদের দিনেরাতে প্রায় আঠারো ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়েছিল। আমাদের খুব ইচ্ছে ছিল সংকলনটি বই আকারে বের করার। কিন্তু মালেক ভাই সংকলনটি আজাদীর সমস্ত পাঠকের হাতে তুলে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাই তাঁর যুক্তি ও সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিই। সংকলনটি এক চতুর্থাংশ ডিমাই আকৃতিতে নিউজপ্রিন্ট কাগজে প্রায় ৪০ হাজার কপি প্রকাশিত হয়। সংকলনটি ঐতিহ্যসচেতন পাঠক ও বুদ্ধিজীবী মহলে বিশেষ সমাদৃত হয়, এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও। পরবর্তীকালে যেসব পত্রিকা চট্টগ্রামের ওপর আলাদা পাতা প্রকাশ করেতে শুরু করে ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’ তাদের খুব কাজে এসেছে।

দৈনিক আজাদীকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি, অনেক অভিজ্ঞতা। অধ্যাপক খালেদ যতদিন সম্পাদক ছিলেন আজাদীতে আমাদের নিয়মিত আড্ডা জমত। আলোচনার বিষয়ের অন্ত ছিল না। সাড়া জাগানো ঘটনা, মজার ঘটনা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, নানা পরিকল্পনাসব নিয়ে আলোচনা চলত। চলত তর্কবিতর্ক। মাঝে মাঝে আজাদীর সমালোচনাও বাদ যেত না। পরচর্চাও যে হতো না তা নয়। আজাদীর লিকার চায়ের সঙ্গে সিঙারা বেশ মুখরোচক মনে হতো। মিষ্টি ও স্ন্যাকসের দোকান হাইওয়ে চালু হওয়ার পর সেখান থেকে মালেক ভাই নানা রকম খাবার আনাতে পছন্দ করতেন। অধ্যাপক খালেদের মৃত্যুর পর আজাদীর সে আড্ডা হারিয়ে গেছে। জহুর ভাই বেঁচে থাকতে মাঝে মাঝে মালেক ভাইয়ের রুমে বসা হত। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সে আসরও ভেঙে গেছে।

অধ্যাপক খালেদের মৃত্যুর পর মালেক ভাই পত্রিকার সম্পাদক হয়েছেন। সম্পাদক হওয়ার আগেও তিনি প্রায়ই সাংবাদিকদের নিয়ে বসতেন। নিজে অনেক সংবাদসূত্র জোগাড় করে সাংবাদিকদের দিয়ে অনুপুঙ্খ প্রতিবেদন লেখার ব্যবস্থা করতেন। সম্পাদক হওয়ার পর তাঁর সে দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আজাদীর সাংবাদিকতার ঐতিহ্য তিনি সফলভাবে ধরে রাখতে পেরেছেন। আজাদীর যেসব সাংবাদিক এ ক্ষেত্রে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং করছেন তাঁরা সকলেই দীর্ঘদিন থেকে আমার পরিচিত। এঁদের মধ্যে আছেন হলেন : সমীর ভট্টাচার্য, রাশেদ রউফ, নিজাম উদ্দিন, দিবাকর ঘোষ, হাসান আকবর, রেজাউল করিম, শুকলাল দাশ, জাহেদ মোতালেব, মোরশেদ তালুকদার, ঋত্বিক নয়ন, ইয়াসমিন ইউসুফ, শামীম আরা লুসি। হাসান আকবর নিয়মিতভাবে রিপোর্টাজধর্মী লেখা আজাদীর পাঠকদের উপহার দেন। রাশেদ রউফ সংবাদিকতার বাইরেও নানা সাহিত্যসাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত। আজাদীর পাতায় নিয়মিত ছড়াকলাম লিখে তিনি পাঠকনন্দিত হয়েছেন।

আজাদীর পথ চলার বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন আকর্ষণীয় পাতা। পুরোনোদের মধ্যে অরুণ দা ‘সাহিত্য সাপ্তাহিকী’ দেখতেন। সিদ্দিক আহমেদ দেখতেন আন্তর্জাতিক পাতা ‘জগৎ জুড়ে’। সিদ্দিক ভাই যে কেবল এই পাতাই দেখতেন তা নয়, প্রায়ই নানা চমকপ্রদ লেখা দিয়ে বিভিন্ন পাতাকে সমৃদ্ধ করতেন।

আজাদীর দুটো ফিচার পাতা সম্পূর্ণ রঙিন ও বড়ো পরিসরে বের হয়। এর একটি হচ্ছে ‘আনন্দন’। তা দেখেন রাশেদ রউফ আর ‘আজমিশালী’র দায়িত্বে রয়েছেন সানজিদা মালেক। পাশাপাশি নারী পাতা দেখার দায়িত্বও সানজিদার। প্রদীপ দেওয়ানজী ‘আগামীদের আসর’ ছাড়াও দেখেন ‘লোকালয়’ এবং ‘নগরমহানগর’ নামে শিল্পবাণিজ্য বিষয়ক নতুন পাতা। একসময় ‘নগরমহানগরে’র ঢাকা অংশ দেখতেন মাহমুদ মনি। ‘জীবনধারা’ পাতাটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ফ্যাশন বিষয়ক। এর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দিকটি দেখছেন প্রবীর বড়ুয়া আর ফ্যাশন দেখছেন সানজিদা মালেক। প্রবীর বড়ুয়া এ ছাড়াও প্রযুক্তির পাতার দায়িত্বে রয়েছেন। খেলার খবর ও খেলার পাতার দায়িত্ব নজরুল ইসলামের। আর নিত্যনতুন বিষয়ে প্রতিদিন তথ্যকণিকা লিখেন মাসহুদা ইয়াসমিন। বিষয় ও উপস্থাপনায় এ সব পাতায় লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। আর এ সবের নিরীক্ষাময় অলংকরণে লেগেছে আধুনিকতার স্পর্শ, রঙের বৈচিত্র্যে যুক্ত হয়েছে উজ্জ্বল বর্ণবিভা। আজাদীতে পুরোনো অনেকের জায়গায় এসেছে অনেক নতুন মুখ। তাঁরা নতুন উদ্যমে আজাদীর হালবৈঠা ধরেছেন।

আজাদী ব্যবসাসফল পত্রিকা। এখন আজাদী ব্যবসার পাশাপাশি পেশাদারিত্বের ওপরও বিশেষ জোর দিচ্ছে। এটা শুভ লক্ষণ। ২০১০এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজীব মীরের সহায়তা নিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে আজাদী। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে মনে হয়, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাবে সব কিছুকে পণ্য হিসেবে দেখে পণ্যমূল্যে বিচার করার যে প্রবণতা আমরা চার পাশে দেখছি, আজাদীতেও তার কিছু কিছু প্রভাব পড়ছে। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক দুটোই আছে।

আজাদীর ব্যবস্থাপনায় এখন এসেছে পরিবর্তন। মালেক ভাই দূরদর্শী দৃষ্টিতে এ ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশেষ করে, পুত্র ওয়াহিদ মালেক ও কন্যা সানজিদা মালেক সোনালীকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন ব্যবস্থাপনার কিছু কিছু দায়িত্ব। এ সব পদক্ষেপ ভবিষ্যৎমুখী ও সম্ভাবনাসূচক। এ ক্ষেত্রে আজাদীর ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের পত্রিকাটির গৌরবময় ঐতিহ্য থেকে পাঠ নিতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে যেন মুক্তবাজার অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাবে আজাদীর হার্দিক দিক আচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে।

গত ষাট বছরে আজাদী স্বদেশ ও বিশ্বের সমস্ত জানালা নিরন্তর আমাদের সামনে খোলা রেখেছে। ঐতিহ্যের সঙ্গে সবসময় যোগ করেছে আধুনিকতাকে। প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করতে সচেষ্ট থেকেছে নবীনের উদ্দীপনা ও স্বপ্নবিভোরতাকে। তাই আজাদীর শেকড় চট্টগ্রামে প্রোথিত হলেও কিছু কিছূ সীমাবদ্ধতা নিয়েও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তা বহুলাংশে জাতীয় মানের। দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে আজাদী জন্মলগ্ন থেকেই নিরপেক্ষ ও অসামপ্রদায়িক। সাংবাদিকতার আদর্শ ও ব্রতের দিক থেকে এ পত্রিকা সবসময় থেকেছে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়বদ্ধ, তা নিরন্তর পালন করেছে দেশব্রতী ও মানবব্রতী ভূমিকা।

মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিন ছাড়া গত পঞ্চাশ বছরে আজাদী প্রতিদিন সকালে নিয়মিত পাঠকদের সামনে হাজির হচ্ছে। সংবাদ ও সাহিত্য, প্রযুক্তি ও বিনোদনের নানা তথ্যউপাদান পরিবেশন করে উপকৃত ও সমৃদ্ধ করছে আমাদের। এ জন্যে আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারসহ প্রয়াত ও কর্মরত সকল সাংবাদিক ও কর্মী হয়ে উঠেছেন বিপুল পাঠক সমাজের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছার পাত্র।

আজাদী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকাটি ষাট বছর অতিক্রম করল ২০২০এ। এ বছর (২০২৩) পালন করছে ৬৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এখন নব উদ্যমে আজাদী এগিয়ে চলুক শতবর্ষের সাফল্যখচিত তোরণের দিকে।

লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজাদী: আমার ভালোবাসার সংবাদপত্র
পরবর্তী নিবন্ধপ্রিমিয়ার ও ১ম বিভাগ ফুটবল লিগের দলবদল