নগরের প্রতিটি এলাকাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে

‘দৃষ্টিনন্দন এলাকা এখন জঞ্জাল’

| সোমবার , ২ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম দ্রুত বর্ধমান একটি নগর, যেখানে বিবিধ উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। দেশের সব প্রান্ত থেকে মানুষ নানা প্রয়োজনে এসে ভিড় করছে নগরী অভিমুখে, বাড়িয়ে তুলছে নগরীর জনসংখ্যাকে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যা নগরীতে নানা কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করছে, যার মধ্যে অন্যতম যানজট। যানজট সৃষ্টিতে রাস্তার মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা, সড়কে বিভিন্ন গতির ও অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, আইন প্রয়োগ ও কার্যকরের অভাব, অপর্যাপ্ত ও অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের অভাব, সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, রাস্তা ও ফুটপাত দখল, অবৈধ রিকশার ছড়াছড়ি, যানবাহনের ইচ্ছামতো চলাচল, যত্রতত্র পার্কিং ও আইন মেনে না চলা, ফুটপাতগুলো দখল, সড়কে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা প্রধান কারণ।
নগরীর আরেকটা সমস্যা হলো অপরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যহানি। বেশিরভাগ সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নাগরিক সেবার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরীকে পরিচ্ছন্ন, আলোকিত ও দৃষ্টিনন্দন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছিল একসময়। নগরীর প্রতিটি মোড়ই সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এক সময় নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঢেকে রেখেছিল বড় বড় বিলবোর্ড। সেই বিলবোর্ড উচ্ছেদের পর নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরী আবারো হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। গত ২৯ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘দৃষ্টিনন্দন এলাকা এখন জঞ্জাল/ যাত্রী ছাউনিতে দোকান, বাস্তবায়ন হয়নি আউটার স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক নানা পরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। সে হিসেবে আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে বেশকিছু কাজও সম্পন্ন হয়েছিল। মাঠ ও ওয়াকওয়ের কাজটা সম্পন্ন হলে এলাকাটি চট্টগ্রাম নগরীর একটি সৌন্দর্যময় জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি। তার উপর পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় শোভা বর্ধনের নামে করা আউটার স্টেডিয়ামের কাজগুলো এক ধরনের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে।
এক সময় আউটার স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে মার্কেট করার চেষ্টা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশিষ্ট নাগরিকদের আন্দোলনের মুখে তা হতে পারেনি। এরপর দীর্ঘ দিন অবহেলায় পড়েছিল আউটার স্টেডিয়াম। দুই বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই আউটার স্টেডিয়াম এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নেয়। যে প্রকল্পে ছিল মুক্ত মঞ্চ, পাবলিক টয়লেট, একটি টি স্টল, ছোট্ট একটি নার্সারি এবং যাত্রী ছাউনি। ভেতরের অংশে ওয়াকওয়ে এবং সবশেষে মাঠ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়নি।
কাজির দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে ছিল অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের অবাধ বিচরণস্থল। ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে থাকতো এখানে। যে কারণে এ সড়কে নাগরিকদের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হতো। তাই সিটি করপোরেশন এ জায়গাটি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য উদ্যোগ নেয়। এলাকাটি সৌন্দর্যবর্ধিতকরণের আওতায় আনার পর ফুটপাতে বোডিং টাইলস স্থাপন, ফুলের বাগান, আলোকায়ন, বসার স্থান, ফুড জোন, অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, যাত্রী ছাউনী, ট্রাফিক পুলিশ বঙ স্থাপন এবং ফুটপাতে ওয়ার্কওয়ে দৃষ্টিনন্দন বাগান সৃষ্টি করার প্রয়াস আমরা লক্ষ করি। কিন্তু বর্তমানে নেই সেই সৌন্দর্য। ওখানে বসেছে বাড়তি অপরিকল্পিত কিছু দোকান। আজাদীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দোকানগুলো বসানো হয়েছে সেসব দোকানের বর্জ্য এবং ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামের ভেতর এবং বাইরের অংশে। এতে স্থানটি যেমন অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। পাশাপাশি যে মুক্তমঞ্চটি করা হয়েছিল সেখানে এখনো পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান করা না হলেও সন্ধ্যায় ছেলে-মেয়েদের আড্ডা জমে। ফলে জায়গাটি খাবারের প্যাকেট আর বাদামের খোসায় অপরিচ্ছন্ন করে ফেলছে তারা।
এটা খুবই দুঃখজনক। সৌন্দর্য নষ্ট করা এ সব স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ করা দরকার। চট্টগ্রামকে দৃষ্টিনন্দন রাখা ও অধিকতর দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। শুধু আউটার স্টেডিয়াম এলাকা নয়, নগরের প্রতিটি এলাকাকে রাখতে হবে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। এক্ষেত্রে নগরবাসীকেও তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে