নগরবাসীর বেদনা অনুভবের চেষ্টা করছেন সিটি মেয়র

কর আরোপের নতুন ভাবনা থেকে সরে আসায় অভিনন্দন

| শনিবার , ২৬ জুন, ২০২১ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)-এর পঞ্চম সাধারণ সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় করের হার বাড়ছে না বলে নগরবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পঞ্চবার্ষিকী পৌরকর মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় গৃহকর বৃদ্ধির আশংকা করছেন নগরবাসী। সেই আশংকা নাকচ করে দিয়ে সিটি মেয়র বলছেন, করের হার বাড়বে না। বরং কর আদায়ের আওতা বাড়ানো হবে।
এ প্রসঙ্গে সভায় মেয়র তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, কোনো ভবন দুই তলা থাকা অবস্থায় যে কর দিত এখন যদি তা তিন তলা, চার তলা বা বহুতল হয়ে যায় তা হলে বর্ধিত অংশের জন্য কর ধার্য কোনোভাবে অযৌক্তিক হয় না। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে নগরবাসীর কর দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু এই আয় দিয়ে সেবার পরিধি বাড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই নিজস্ব ভূ-সম্পত্তিতে আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোন এলাকায় কী ধরনের আয়বর্ধক প্রকল্প করা যায় সে জন্য কাউন্সিলরদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে আমরা নগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চাই এই বলে যে, তিনি নগরবাসীর বেদনাকে অনুভব করার চেষ্টা করেছেন। আজাদীতে নিজস্ব প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রতিদিন বিশিষ্ট জনের অভিমত, পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মতামতও প্রকাশিত হয়েছে। সেই আলোকে সিটি মেয়র তাঁর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করার প্রয়াস পেয়েছেন। আসলে নগরবাসী কর দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু কী পরিমাণে কর দেওয়া হবে বা কত হারে কর পরিশোধ করা হবে, সেটার ক্ষেত্রে রয়েছে তাঁদের পর্যবেক্ষণ।
গত ৩ জুন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে ২০১৭ সালের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ‘কর আদায়’ অথবা স্থগিতকৃত পুনর্মূল্যায়ন বাতিল করে নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের এই প্রস্তাবের খবর এবং সাবেক মেয়র ও বিশিষ্ট জনদের প্রতিক্রিয়া ১৩ ও ১৪ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর মনে। তাছাড়া আজাদী এ প্রসঙ্গে ‘কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে সিটি মেয়রকে ভাবতে হবে’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে ১৫ জুন। সেখানে বলা হয়েছে, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাঁরা মনে করছেন গৃহকর বাড়ানো হলে নগরবাসীর জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বাড়ির মালিকদের আশঙ্কা, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে সেই ‘অতিরিক্ত’ কর পরিশোধ করতে হবে তাঁদের। পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধ হবে সরকারের আন্তরিকতা। হ্রাস পাবে জনপ্রিয়তাও। বলা হয়েছে, দেশের মানুষ এমনিতেই করোনা পরিস্থিতিতে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, কর্মহীনতা ও নানা কারণে আর্থিক সক্ষমতা কমেছে তাদের। এ অবস্থায় পৌরকরের হার বাড়লে তা হবে আরো অসহনীয়। সাধারণ মানুষ এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, সেবার মূল্যবৃদ্ধি, ভ্যাট, ট্যাঙসহ নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করে জর্জরিত। এর মধ্যে গৃহকর বাড়ানো হলে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে।
নাগরিকদের অভিমত হলো, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’ বা ‘সিটি ট্যাক্স’ হওয়া উচিত- সিটি কর্পোরেশনের প্রদত্ত নাগরিক সুবিধা ও ভবনের আয়তন অনুযায়ী। যেমন- সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের জন্য রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণ করে (রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সিডিএ), সড়ক বাতির ব্যবস্থা করে, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে, নালা-নর্দমা নির্মাণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে, সর্বোপরি নাগরিকদের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করে। তাছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ নাগরিকদের জাতীয়তা/জন্ম সনদ এবং সালিশ-বিচারসহ অন্যান্য সেবাও দিয়ে থাকেন। মোট কথা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো-নাগরিক সেবা নিশ্চিত করে নাগরিকদের নিরাপদ বসবাস সুনিশ্চিত করা। সুতরাং এই সেবামূলক কাজের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স বা সিটি ট্যাক্স হওয়া উচিত ‘ভবন অনুযায়ী’ বা ‘ভবনের আয়তন’ অনুযায়ী।
সে হিসেবে কর পুনর্মূল্যায়নে ২০১৭ সালের স্থগিতাদেশ বলবৎ রাখার ওপর জোর দিতে হবে। নতুন করে কর আরোপের ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে মেয়রকে। করের আওতা বাড়ানোর জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে, তা যথাযথ হবে বলে আমরা মনে করি। হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আয় ছাড়াও অন্যান্য আয়বর্ধক প্রকল্প হতে কর্পোরেশনের আয় বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে