দ্বিতীয় আপিল শুনানিতেও করদাতাদের সন্তোষ

মেয়রের উপস্থিতিতে ১৫৭টি আপিল নিষ্পত্তি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়রের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্রস্তাবিত পৌরকরের (হোল্ডিং ট্যাক্স ও রেইট) দ্বিতীয় আপিল শুনানিতেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন করদাতারা। প্রত্যাশার ‘সহনীয়’ গৃহকর নির্ধারণ করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা। ধন্যবাদ জানান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে। প্রতিশ্রুতি দেন সময়মত গৃহকর পরিশোধের। এসময় মেয়রও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান করদাতাদের। গতকাল বুধবার পাহাড়তলী নয়াবাজার মোড়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগের ৬ নম্বর সার্কেলের রিভিউ বোর্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত থেকে করদাতাদের অভিযোগ শুনে সমাধান দেন মেয়র। করদাতাদের সামর্থ্য অনুযায়ী গৃহকর নির্ধারণ করে দেন। শুনানিতে ১৫৭টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে উত্তর পাহাড়তলীর ৪৫টি, দক্ষিণ কাট্টলীর ৩৬টি, সরাইপাড়ার ৪৪টি এবং উত্তর কাট্টলীর রয়েছে ৩২টি।

শুনানিতে নিষ্পত্তি হওয়া উত্তর পাহাড়তলীর আলহাজ্ব দস্তগীর চৌধুরীর ১৯৮/২০৩ হোল্ডিংয়ের বিপরীতে গৃহকরের মূল্যায়ন ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। যা চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়নে বৃদ্ধি করে প্রস্তাব করা হয় ২৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আপিল করেন তিনি। গতকাল শুনানিতে তা কমিয়ে চার লাখ ২৫ হাজার টাকায় চূড়ান্ত করেন মেয়র। একই এলাকার মো. হাসেম সওদাগরের পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকার ভেল্যু কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় দেড় লাখ টাকা।

দক্ষিণ কাট্টলীর মো. লোকমানের দুই লাখ প্রস্তাবিত মূল্যায়ন কমিয়ে ৩০ হাজার টাকা এবং মো. সোলাইমানের এক লাখ ৭০ হাজার টাকার ভেল্যু নির্ধারণ করা হয় ৭০ হাজার টাকায়। একই এলাকার মো. হারুনের হোল্ডিং এসেসমেন্টের পর নির্ধারিত চার লাখ টাকার মূল্যায়নকে চূড়ান্ত করা হয় দেড় লাখ টাকায়।

মোজাম্মেল নামে এক করদাতা জানান, ৪৫ হাজার টাকার ভেল্যুয়েশন বাড়িয়ে চার লাখ ২০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। আপিলে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ টাকা। এতে আমি সন্তুষ্ট। মালেকা নামে আরেক করদাতার লাখ ৮৮ হাজার টাকার মূল্যায়নকে শুনানিতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করায় ধন্যবাদ জানান মেয়রকে।

সরাইপাড়ার জিন্নাত বেগম নামে এক করদাতার ভবনের ভেল্যুয়েশন ছিল ৫০ হাজার টাকা। এসেসমেন্টে তা এক লাফে বাড়িয়ে করা হয় আট লাখ ২৮ হাজার টাকা। গতকাল আপিল শুনানিতে তা কমিয়ে করা হয় মাত্র ৬০ হাজার টাকা।

শুনানিতে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বশরের ছেলে বলেন, এতদিন গণশুনানির কথা শুনেছি। লোকজন বলত শুনানিতে কিছু হয় না। কিন্তু আজ (গতকাল) এসে বাস্তবে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। শুনানিতে সরাসরি স্যারের (মেয়র) কাছে এলাম। আমি আমার অবস্থান তুলে ধরেছি। এর প্রেক্ষিতে আমাকে অনেক কনসিডার করেছেন, সহনীয় কর নির্ধারণ করেছেন। এতে আমি সন্তুষ্ট। আশা করছি সবাই সময়মত গৃহকর পরিশোধ করে মেয়রের হাতকে শক্তিশালী করব এবং নগর উন্নয়নে আমাদের ভূমিকা রাখব।

প্রসঙ্গত, সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। তার মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাঙ (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আর্বজনা অপসারণ রেইট রয়েছে।

দি সিটি কর্পোরেশন ট্যাঙেশান রুলস অ্যাক্ট ১৯৮৬ এর ২১ ধারা মতে, সিটি এলাকায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সকল প্রকার স্থাপনার পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সরেজমিন সংগ্রহ করে পৌরকর নির্ধারণ করা হয়। আইনটির আলোকে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে গৃহ ও ভূমির পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন (রি-এসেসমেন্ট) করে চসিক। পুনর্মূল্যায়ন শেষে তা ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়।

তখন প্রস্তাবিত পৌরকের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান ভবন মালিকরা। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে তারা মাঠে নামেন। এক্ষেত্রে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একই বছরের ২৭ নভেম্বর থেকে এসেসমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত করেছিল চসিক। গত ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের এসেসমেন্ট’র আলোকে কর আদায়ে কার্যক্রম শুরু করে চসিক।

এদিকে গত ২৩ আগস্ট থেকে আবারও আন্দোলন শুরু করে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। সংগঠনটির আন্দোলনের মধ্যেই আপিল শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন স্বয়ং মেয়র। গত ১৪ ডিসেম্বর রাজস্ব সার্কেল-২ এর আওতাভুক্ত চান্দগাঁও, পূর্ব ষোলশহর ও মোহরা ওয়ার্ডের ১৪৭টি আপিল নিষ্পত্তি করেন তিনি।

গতকাল শুনানি চলাকালে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, শুনানিতে করদাতারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এখন থেকে করদাতাগণ আর বিভ্রান্ত হবার সুযোগ থাকবে না। করদাতাদের উপস্থিতিতে রিভিউ বোর্ড ইচ্ছেমাফিক কর নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে সকলেই খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন। মেয়র বলেন, ২০১৭ সালে যে কর মূল্যায়ন করা হয়েছিল তাতে অনেক অসঙ্গতি ছিল। ফলে নগরবাসী আন্দোলন শুরু করলে তা স্থগিত করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকায় আবার কর আদায়ের কাজ শুরু করেছি। কর মূল্যায়ন ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দূর করার জন্য তিনটি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে আপিল বোর্ড গঠন করা হয়।

তিনি বলেন, কর্পোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। গৃহকরের উপর নির্ভর করে নগরের উন্নয়ন ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়াও কর্পোরেশন কাজের আওতার বাহরে ৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪৬৩টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও ৪১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৪টি মাতৃসদন ও জেনারেল হাসপাতাল পরিচালনা করতে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হয়। যার ফলে চসিককে স্বাবলম্বী হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পূর্বে সরকার থেকে যে থোক বরাদ্দ পাওয়া যেত তাও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি নগরবাসীর উদেশ্যে বলেন, আপনারা নিয়মিত কর প্রদান করে আমাকে সহায়তা করুন। আমি আমার দায়িত্ব পালনকালে আপনাদের একটি সুন্দর নগরী উপহার দেব। তিনি কর না দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে সেবাকার্যে অংশ নিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রিভিউ বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর আবদুল মান্নান, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, জহুরুল আলম জসিম, অধ্যাপক মো. ইসমাইল, মো. নূরুল আমিন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর তসলিমা নুরজাহান রুবি, চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, রিভিউ বোর্ডের সদস্য এডভোকেট রোকন উদ্দিন মুন্না, প্রকৌশলী রশিদুল করিম ও কর কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্মাননা পাচ্ছেন ৪২ সেরা করদাতা
পরবর্তী নিবন্ধখোঁজ মিলল জাহাজটির