দোহাজারীতে রাতে কেটে নেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছ

পুড়ে দেয়া হয় সদ্য কাটা গাছের গোড়া

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের দোহাজারী রেঞ্জের আওতাধীন চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে রাতের আঁধারে কেটে নেয়া হচ্ছে সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট হয়ে প্রতিরাতেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের কবল থেকে বাদ যাচ্ছে না সামাজিক ও সুফল প্রজেক্টের আওতায় সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির গাছও।

স্থানীয়রা জানান, গাছগুলো রাতে কেটে রাতেই সুবিধাজনক সময়ে ট্রাক/মিনিট্রাকে করে পাচার করা হয়। বনবিভাগের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠ আটক করা হলেও অধিকাংশ কাঠ পাচার হয়ে যায়। গত সপ্তাহে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের হাইত্তারঘোনা এলাকায় একটি বিশাল সেগুন গাছ কেটে নেয়া হয়। এতে এলাকাবাসী বাধা দিলে তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতনের হুমকি। গত ৩১ জানুয়ারি রাতেও ইউনিয়নের গোলারপাহাড়ের পাশের এলাকায় একটি বিশাল সেগুন গাছ কেটে টুকরো করার সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বনরক্ষিরা অভিযান চালিয়ে কাটা সেগুন গাছটি উদ্ধার করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন, এলাকার প্রভাবশালীরাই গাছ কাটার সাথে জড়িত। গাছ কেটে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় গাছের অবশিষ্ট গোড়া, যাতে কেউ বুঝতে না পারে সদ্য গাছটি কাটা হয়েছে। এভাবেই প্রতি রাতে পাহাড়ি অঞ্চলে গাছ কাটা হচ্ছে। বনদস্যুরা প্রতিরাতে মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেলেও বনবিভাগের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান পরিচালিত হয় না এবং মামলাও করা হয় না। ফলে বনদস্যুরা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এলাকাবাসীরা আরো অভিযোগ করেন গাছ কাটার সময় বনদস্যুরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আশেপাশের বাড়ির আঙ্গিনায় অবস্থান করে এবং আশেপাশের বাড়ির দরজা জানালায় তালা লাগিয়ে দেয়। যাতে কেউ বের হতে না পারে। আবার কেউ বের হলেই তাদের হত্যার হুমকিও দেয়া হয়।

সাঙ্গু বিট কর্মকর্তা ঝন্টু দে জানান, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে যে স্থানে গাছটি কাটা হয়েছে তার দূরত্ব আমাদের অফিস থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। ওইদিন রাতে গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় কাটা অবস্থায় ২০ ঘনফুটের ১টি বড় সেগুন গাছ উদ্ধার করি। যার আনুমানিক মূল্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। গাছ কাটার ব্যাপারে বন আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে গাছ কাটার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করণের কাজ চলছে। স্থানীয় ভিলেজারদের সাথে কথা বলে আমরা ১ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি।

তিনি আরো জানান, একটি বড় সিন্ডিকেট গাছ কাটার সাথে জড়িত। তাদের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। রাত ১২টার পর কিছু লোক রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় ঘুরাফেরা করে। মূলত তারা রাতে বনদস্যুদের সোর্স হিসেবে কাজ করে। আমরা অভিযানে নামলেই এদের মাধ্যমে মুহুর্তেই খবর পৌঁছে যায় তাদের কাছে। ফলে তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জানান, ধোপাছড়ির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি রাতে গাছ কাটার খবর পাচ্ছি। বিশেষ করে ১ ও ২ নং ওয়ার্ডে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বড় সেগুন গাছ কাটার সংবাদ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমি নিজে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা, রেঞ্জ কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অবহিত করেছি। যারা গাছ কাটছে তারা সকলেই চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ট্রাক চাপায় মানসিক ভারসাম্যহীন নারী নিহত
পরবর্তী নিবন্ধশাহজালালে ইউএস বাংলার বাসে ১৪ কেজি সোনা, চালক আটক