দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্ত ‘অব্যবস্থাপনা’ দূর হোক

| বৃহস্পতিবার , ৭ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ। আন্তর্জাতিকভাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে দেশে দেশে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হচ্ছে এ দিবস। জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র জন্মদিন ৭ এপ্রিল ১৯৪৮। এখানে উল্লেখ করতে হয়, এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার ২ মাস পর ২৪ জুন ১৯৪৮ সালে এ সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। সেই সময় সারা বিশ্বের ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নো ইউর হেলথ সার্ভিসেস’ যার অর্থ দাঁড়ায় ‘নিজের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন হোন’। এভাবে ৭২ বছর ধরে ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য’।
এ কথা আজ নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য হলো উন্নয়নযাত্রার পূর্বশর্ত। অন্যসব বিষয়ের মতো আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। গত ৫০ বছরের অভিযাত্রায় স্বাস্থ্যসেবার সফলতার জায়গাগুলো অবশ্যই উল্লেখ করার মতো। অন্যদিকে যেসব প্রতিবন্ধকতার কারণে সাধারণ মানুষের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে, সেগুলোকেও চিহ্নিত করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, আমাদের বিদ্যমান বাধা দূর করে অগ্রযাত্রার পথ অনুসন্ধান করতে হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বিশাল অর্জন রয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে টিকাদান কর্মসূচি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু ও পুষ্টি উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা রয়েছে। দেশে গড় আয়ু ৪০ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ বছর হয়েছে। দেশে গত ৫০ বছরে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ও বিশেষায়িত শিক্ষা ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি হয়েছে; যারা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন। একসময় বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানি করা হতো। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন হয়। তাঁরা বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে জনবান্ধবমুখী করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ জনবল তৈরির ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারের বিষয়টিতে নজর দেয়া প্রয়োজন। সরকারি পর্যায়ের হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগিতার বিষয়টিতে খেয়াল রাখলে রাষ্ট্রীয় খরচ কমবে এবং সাধারণ মানুষ আরও কম খরচে চিকিৎসা পাবেন। তাঁরা বলেন, মানুষকে পকেটের টাকা খরচ করে অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে সেবা কিনতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারকে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে আগামী পাঁচ বছরে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি করা, রোগীদের কম খরচে ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অগ্রযাত্রা ও প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে লিখতে গিয়ে বলেছেন, জরুরি চিকিৎসাসেবা নামের একটি ব্যবস্থা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এর প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনা করা নিতান্তই বাহুল্য। জরুরি ও জটিল রোগীর চিকিৎসার জন্য কার্যকর রেফারেল পদ্ধতি গড়ে তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কমিউনিটি ক্লিনিক বা মেডিকেল সাবসেন্টার থেকে উপজেলা হাসপাতাল, উপজেলা থেকে জেলা হাসপাতাল এবং জেলা থেকে টারশিয়ারি অথবা বিশেষায়িত হাসপাতাল পর্যন্ত কার্যকর একটি রেফারেল পদ্ধতি এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রমে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে। জরুরি চিকিৎসাসেবার বিষয়ে বলা যায়-এক্ষেত্রে জীবনকে সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। তিনি আরো লিখলেন, গত তিন দশকে দেশে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা খাতের একটি উল্লম্ফন ঘটেছে। সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের সামর্থ্য অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি খাতকে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের দিক থেকে বিস্তর উদাসীনতা রয়েছে। বেসরকারি খাতকে জনবান্ধব ও আইনানুগ পথে বিকশিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে।
দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে ‘অব্যবস্থাপনা’। এই অভিযোগ কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিভাগ আশা করি বেশি মনোযোগী হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে