দেশের সম্পদ সীমিত, পাটকে কাজে লাগাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

| শুক্রবার , ১৫ মার্চ, ২০২৪ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি বেশি উৎপাদনে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের সম্পদ খুবই সীমিত। কাজেই পাটকে কাজে লাগাতে হবে। একসময় পাট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হত। আমাদের দেশে সবচেয়ে উন্নত মানের পাট হয়। অর্থনীতিতে একে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও বাড়বে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার পাট দিবসের অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাটের সবকিছুই কাজে লাগানো যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাট গাছ ও এর আঁশ এবং পাতার বহুমুখী ব্যবহার হয় এখন। পাট ও চামড়ার সংমিশ্রণে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে, সেগুলো বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। আবার পাটশলা ব্যবহার করে আসবাবপত্র বানানোয় গাছের উপর নির্ভরতা অনেক কমেছে। খবর বিডিনিউজের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও পাটের একসময় খারাপ সময় আসে, যখন কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কার হয়। কিন্তু মানুষ এখন সচেতন। যেহেতু পাট পরিবেশবান্ধব, তাই সেটিকে কীভাবে আরো উন্নত করা যায়, সেদিকে কাজ করা হচ্ছে।

পাটকে কৃষিজাত ও রপ্তানিমুখী পণ্যের স্বীকৃতি এবং প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসার পর পাট নিয়ে গবেষণার উপর জোর দেওয়া হয়, পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচন হয়। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোতে আমাদের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এটি আবিষ্কারে। ফলে পাটের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। কাজেই সেই সব দিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাট থেকে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। একটা সময় পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, এটা আমাদের জন্য ছিল খুবই অশুভ সংকেত। পাটকলগুলো শেষ করে দেয়নি সরকার, সেগুলো বেসরকারিকরণে প্রাণ ফিরেছে এ শিল্পে। পুরনো মিলের পাশাপাশি নতুন যন্ত্রপাতি কিনে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।

পাটকলগুলো ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন মেশিনারিজ কিনে আরো নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। যারা ইজারা নিয়েছেন পাটকল, তারা নজরদারিতে থাকবেন। সোনালি আঁশই সোনার বাংলা গড়তে সহায়তা করবে।

পাট দিবসের অনুষ্ঠানে পাটের ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাটের শাড়ি ছাড়া একসময় বিয়েই হত না দেশে। এখন তো সেসব হারিয়ে গেছে। আমি নিজেও এখন যে শাড়িটা পরে আছি, সেটিও পাটের তৈরি। পাটের তৈরি পণ্যের প্রচার প্রয়োজন। বর্তমানে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউয়ের মত গাড়ির ইন্টেরিয়রে লাইনার বানানো হয় পাট থেকে। অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে এটি।

নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ :

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা মোটেও শুভ ছিল না। পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাটের জন্ম রহস্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাট ও পাট শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার খুঁজতে হবে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাট ব্যবহারে সুযোগ বেড়েছে। বর্তমান যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশ বান্ধব পণ্যের, পাট তেমন একটি পণ্য। একদিকে পাট আমাদের কিছু পণ্য, অন্যদিকে পাট আমাদের শিল্পের কাঁচামাল। এ দেশীয় পণ্যটা যদি আমার উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে পাটই আমাদের জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারে। দেশীয় বিভিন্ন কাজে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহার হয়। পাটের আঁশ ও চামড়া মিলে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি। পাটজাত পণ্য যত বেশি উৎপাদন বাড়াতে পারব, দেশীয় কাজে যেমন লাগবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে বিরাট দুয়ার খুলে দেবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পাটের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা, কোন দেশে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা আছে সেটা দেখা, সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। পাট দিবসের অনুষ্ঠানে ছয়টি পাটকলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি গাজী গোলাম দস্তগীর উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬