দুই সপ্তাহের রিমান্ডে সুচি

নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা আটকাল চীন মিয়ানমারে দানা বাঁধছে প্রতিবাদ

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

একাধিক অভিযোগে অং সান সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাকে দুই সপ্তাহের রিমান্ডে নেওয়া হবে। এছাড়া মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) দপ্তরগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে চীন। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গনে প্রতিরোধ এবং বেসামরিক নাগরিকদের অসন্তোষ বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসকরা রেড রিবন মুভমেন্ট কর্মসূচি শুরু করেছেন। বাসিন্দারা মোমবাতি জ্বালানো, রান্নার পাত্র এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দুই সপ্তাহের রিমান্ড : সেনা অভ্যুত্থানে বন্দি অং সান সু চির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করেছে মিয়ানমার পুলিশ। তদন্তের জন্য আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে। পুলিশের কিছু নথিপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় বিবিসি। সু চির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তার মধ্যে আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘন এবং যোগাযোগের বেআইনি যন্ত্র রাখার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে তার দুই বছরের জেল হতে পারে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
সর্বশেষ নির্বাচনের ফল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত সোমবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতার দখল নেয় এবং ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ নির্বাচিত বেশ কয়েকজন এমপিকে আটক করে।
ওই দিন নতুন সরকারের পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। সেনাবাহিনী সু চিকে কোথায় বন্দি করে রেখেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে শোনা যাচ্ছে, সু চিকে রাজধানী নিপিধোতে তার নিজ বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
সু চি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট মিন্টের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে। তার বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে গণজমায়েত নিষিদ্ধের আদেশ লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। তাকেও দুই সপ্তাহ পুলিশি হেফাজতে রাখা হবে।
অভিযোগ যা বলা হয়েছে : সু চি ও প্রেসিডেন্ট মিন্টের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জামা দিয়েছে বলে জানায় বিবিসি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সু চি যোগাযোগের জন্য অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি করেছেন। যেটা তার নিপিধোর বাড়িতে পাওয়া গেছে। মিন্টের বিরুদ্ধে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে অভিযোগ দায়ের করে বলা হয়, তিনি কোভিড মহামারীর মধ্যে নিয়ম লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচারের সময় সমর্থকদের নিয়ে মোটর শোভাযাত্রা করেছেন।
সু চির দলের দপ্তরে অভিযান : মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে সু চির এনএলডির দপ্তরগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। ওই অভিযানগুলোর সময় জোর করে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে এবং নথি, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে গতকাল ফেইসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে এনএলডি। মঙ্গলবার থেকে এসব অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে এনএলডির বিরুদ্ধে শুরু করা বেআইনি কাজ বন্ধ করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা আটকাল চীন : মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে চীন। মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসলেও চীনের সমর্থন না থাকায় অভ্যুত্থানের নিন্দা করে কোনো বিবৃতি দিতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের অন্যতম হওয়ায় যেকোনো যৌথ বিবৃতির ক্ষেত্রে চীনের সমর্থনের প্রয়োজন হয়। এই বৈঠকের আগে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিনা শানার দেশটিতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের তীব্র নিন্দা জানান।
পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেউ কেউ দেশটির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকিও দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ অসংখ্য দেশ মিয়ানমারে ক্ষমতার এ পটপরিবর্তনের নিন্দা জানিয়েছে।
দানা বাঁধছে প্রতিবাদ : বিবিসি জানায়, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের তৃতীয় দিনে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। দেশটির বড় শহরগুলোর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিকিৎসক, সেবাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অনেকেই তাদের চাকরি ছেড়েছেন। অনেক চিকিৎসক রোগীর কথা বিবেচনায় নিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা জান্তা সরকারের নতুন মন্ত্রীসভাকে স্বীকৃতি দেবেন না বলে জানিয়েছেন। একই সাথে তারা রেড রিবন মুভমেন্ট মিয়ানমার ২০২০ নামে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।

অনলাইন কিংবা অফলাইনে এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা জানিয়েছে ইয়াঙ্গনের বাসিন্দারাও। তারা নিজেদের প্রোফাইল পিকচার বদলে লাল করেছে কিংবা তিন আঙুল দিয়ে স্যালুট দিয়েছে। এই কর্মসূচিটি মূলত সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্কিত ব্যবসা এবং সেবা পরিহার কর্মসূচি।
এছাড়া বাসিন্দারা রাতে মোমবাতি জ্বালানো, রান্নার পাত্র এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে ধাতব বালতি বাজানোর মাধ্যমে শয়তানের আত্মা তাড়ানোর প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগাফিলতিতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়লে ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়া ও দোহাজারী রুটে দুই জোড়া কমিউটার ট্রেন