দুই ধারাতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দুই যুবকের

বাদুরতলায় শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বাদুরতলা এলাকায় ছয় বছর আগে নয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দুই ধারাতে দুই যুবককে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ছয় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। তারা হলেন, সুনামগঞ্জের সলুকাবাদ এলাকার মো. রুকনের ছেলে মো. জীবন ও কুমিল্লার দেবিদ্বার এলাকার মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে মো. ইমন হাসান। গতকাল চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় ঘোষণা করেন।

এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত দুই যুবক কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের পিপি খন্দকার আরিফুল আলম আজাদীকে বলেন, ঘর থেকে বের হয়ে কিছু একটা কিনতে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হতে হয় শিশুকে। সে একটি ক্যাডেট মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। সে আসামি জীবনকে চিনত। জীবনের বন্ধু হচ্ছে ইমন। ইমন বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে মাছ কাটার কাজ করত। জীবন ঘটনাস্থল নাইমা ভবনের নীচের একটি দোকানের কর্মচারী। দুজনে মিলে ভিকটিম শিশুকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন আগে থেকে জীবনের দোকানে চলে আসে ইমন।

একপর্যায়ে দুপুর ১২ টার দিকে ভিকটিম শিশু দোকানে আসলে খেলনা দেওয়ার কথা বলে ভবনের উপরে থাকা গোদামে নিয়ে যায়। ভবনটি পুরোটাই কর্পোরেট ছিল। আবাসিক ছিল না। প্রথমে জীবন ধর্ষণ করে। পাহারে দেই ইমন। এরপর ইমন ধর্ষণ করে। এ সময় পাহারা দেই জীবন। পরে ভিকটিম শিশু বাবাকে বলে দেবে বললে দুই আসামি মিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। রক্তাক্ত হয় শিশু। এরপর লাশ একটি কার্টুনে ভরে ভবনের সিঁড়ির পাশে রেখে দেই।

রায়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে পিপি বলেন, ঘটনার পর থেকে ভিকটিম শিশুকে খুঁজতে থাকে তার পরিবার। থানায় জিডি করে। ডিবি অফিসকেও জানানো হয়। এলাকার লোকজনও জড়ো হয়। একপর্যায়ে ১৫ তারিখ ভিকটিম শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। এরপর প্রথমে ইমন ও পরে জীবন গ্রেপ্তার হয়। আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দুজনই ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেই। এরপর থেকে তারা কারাগারে আছেন। পিপি বলেন, এখানে অপরাধ দুটি। ধর্ষণ ও হত্যা। এ জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯() ধারায় দুজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা করে জরিমানা ও দণ্ডবিধির ৩০২ ও ২০১ ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। কারাদণ্ড দুটি একসাথে চলবে বলে রায়ে বলেছেন বিচারক। এটি ‘ডাবল’ আমৃত্যু কারাদণ্ড রায় বলেও জানান পিপি খন্দকার আরিফুল আলম।

আদালতসূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাঁচলাইশ থানাধীন বাদুরতলা এলাকায় ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় প্রথমে জিডি ও পরে মামলা করেন শিশুর পিতা। তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর চার্জগঠন করে দুজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।

পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সুরতহাল, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিখিত সাক্ষীদের বক্তব্য এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ায় দুই আসামিকে ‘ডাবল’ আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। বিচারকাজ পরিচালনায় বিচারক মোট ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। এর মধ্যে বাদী, শিশুর মা, তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক, স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি রেকর্ডকারী দুই জন ম্যাজিস্ট্রেটও আছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভিভাবকদের সতর্কবার্তা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা কেন্দ্রে আগে চলে আসার আহ্বান
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ-বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে মীরসরাইয়ে উত্তেজনা