দখল-উচ্ছেদের খেলা বন্ধ করতে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ

| বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীতে সড়ক, ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনায় জোরালো অভিযান চললেও নগরবাসীর স্বস্তি মেলে না। কেননা, উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল হয়ে যায়। দখল হয়ে যায় সাধারণ মানুষের হাঁটা-চলার পথ। ফলে সড়ক ও ফুটপাতে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। দখল এবং পুনর্দখল বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন সিএমপির সহযোগিতা চেয়েছে। গত ৩ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, নগরের সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে গত দুই মাসে ছোট-বড় ৪০টির বেশি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ সব অভিযানে দুই হাজারের বেশি হকার ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলোর মধ্যে পাঁচ-ছয়টি স্পট ছাড়া বাকিগুলো ফিরে গেছে পূর্বের অবস্থায়। অর্থাৎ উচ্ছেদকৃত বেশিরভাগ জায়গা আবারো দখলে নিয়েছে হকার ও ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল রোধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহযোগিতা চেয়েছে চসিক। এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়কে চিঠি দিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। এতে উচ্ছেদের পর পুনর্দখল ঠেকাতে স্থানীয় থানার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
নগর বিশ্লেষকরা বলেন, দখল-উচ্ছেদের এ খেলা নতুন নয়। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এভাবেই একদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে, অন্যদিকে আবার সেগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। বারবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা থিতু হয়ে এলে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জায়গায় ফের গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দেয়, উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর যদি আবারও সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়, তবে এত টাকা ব্যয় করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অর্থ কী? দখল-উচ্ছেদের খেলা বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। উদ্ধার করা জায়গায় তদারকি জোরদার করতে হবে। স্থানটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার একটা টেকসই পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দখলদার উচ্ছেদ করে সেখানে কিছু না করে রেখে আসা যাবে না।
এ কথা বলা জরুরি যে, নগরজীবনের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে হাঁটার রাস্তায় স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা। ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে পথচারীদের হাঁটতে হচ্ছে সড়ক ধরে। অথবা ফুটপাতের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে স্বল্প দূরত্ব পার হচ্ছে রিকশা বা অন্য কোনো গাড়ি দিয়ে। আর পার্কিংয়ের জায়গায় অন্য স্থাপনা থাকায় সড়ক দখল করে দাঁড়িয়ে থাকছে গাড়ি। ফলে নিত্য যানজটের এই নগরে তৈরি হচ্ছে আরও যানজট। এটা কেবল কোনো এক দিনের চিত্র নয়। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলে আসছে। সিটি করপোরেশন, পুলিশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অভিযানও কম হয়নি। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কখনো। প্রতিবার অভিযানের সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, আগে যা হয়েছে, এবার থেকে পাল্টে যাবে পরিস্থিতি। কিন্তু পাল্টায় না কখনো। বরং দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে সব। দখল হচ্ছে নতুন নতুন জায়গা। অস্থায়ী দোকানগুলো কখন স্থায়ী হয়ে যায়, তা বুঝতেই পারে না কেউ।
অভিযানে উচ্ছেদ হয় না তা নয়, কিন্তু সেটি দিন কয়েকের জন্য, কখনো বা ক্ষণিকের জন্য। আবার ফিরে আসে দখলদাররা। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সিএমপির সহযোগিতা চেয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, সিএমপি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা দেবে। চট্টগ্রাম নগরকে নান্দনিক, বাসযোগ্য ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারী হকার এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করে জনচলাচল নির্বিঘ্ন করা দরকার।
উচ্ছেদ কাজে পুলিশ ফোর্স নিয়োজিত করে সিএমপি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কিন্তু উচ্ছেদ পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ হকার ও ব্যবসায়ীরা আবার ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ফেলছে। ফলে চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রমের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথাগুলো সিএমপি কমিশনারকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে। তাই উচ্ছেদকৃত রাস্তা ও ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নগরের থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সড়ক ও ফুটপাত যেমন দখলমুক্ত করে যান ও জনচলাচলের জন্য অবারিত করে দিতে হবে, তেমনি এটাও মনে রাখতে হবে-হকার বা অস্থায়ী দোকানদাররা নগরীর একটি অনিবার্য বাস্তবতা। রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে না পারলে সমস্ত উচ্ছেদ অভিযান মূল্যহীন হয়ে যাবে। তবে, আমরা মনে করি, সদিচ্ছা ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে