থেমে নেই ওষুধ চুরি

চমেক হাসপাতাল ।। এবার গাইনি ওয়ার্ডের ওটির পাশ থেকে জমানো এক ব্যাগ ওষুধ উদ্ধার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

সরকারি ওষুধ চুরি যেন কোনোভাবে ঠেকানোই যাচ্ছে না চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সমপ্রতি অর্থোপেডিক ওয়ার্ড থেকে বিনামূল্যের ওষুধ বাইরে পাচারের সময় দুই কর্মচারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গতকাল আরো কিছু সরকারি ওষুধ জব্দ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গাইনি ওয়ার্ডের অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) পার্শ্ববর্তী প্রি-অপারেটিভ কক্ষের এক কোণে একটি ব্যাগে (থলে) জমানো সরকারি এ সব ওষুধ-স্যালাইন জব্দ করা হয়। সুযোগ বুঝে বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে বিনামূল্যের এ সব স্যালাইন-ওষুধ সেখানে জমানো হয়েছিল বলে ধারণা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ওষুধ উদ্ধারের তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। এ সব স্যালাইন-ওষুধ জমানোর সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানালেন হাসপাতাল পরিচালক।
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আনসার কমান্ডারকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কামরুজ্জামান গতকাল দুপুরে রুটিন টহল দিচ্ছিলেন। টহলকালীন গাইনি ওয়ার্ডের ওটির পাশে প্রি-অপারেটিভ কক্ষের এক কোণে কাপড়ে ঢাকা কিছু একটায় চোখ যায় তাদের। সন্দেহের জেরে কাপড় সরালে সেখানে একটি ব্যাগে বেশ কিছু ওষুধ ও স্যালাইন দেখতে পান তারা। বিনামূল্যের এ সব ওষুধ-স্যালাইন হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তরে নিয়ে আসেন তারা। তবে ব্যাগে কি কি ওষুধ রয়েছে, তার তালিকা করতে পারেনি হাসপাতাল প্রশাসন। যদিও ব্যাগের ভিতর বেশ কিছু স্যালাইন দেখা যাচ্ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সব ওষুধ পাচারের উদ্দেশ্যে সেখানে জমানো হয়েছিল। সুযোগ বুঝে বাইরে পাচার করা হতো। আর হাসপাতালের স্টাফরাই (কর্মচারী) এ কাজে জড়িত। ওষুধ জব্দের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।
উল্লেখ্য, হাসপাতালের রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য সরকারিভাবে এ সব ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু গরীব রোগীদের বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও হাসপাতাল থেকে এ সব ওষুধ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বাইরে। আর এই পাচার চক্রে জড়িত খোদ হাসপাতালের কর্মচারীরাই। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে দুজনকে আটক করেন হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। এদের একজন হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তী (৩২)। তিনি ২৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত। অপরজন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী মো. সৈয়দ (৫০)। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোর্পদ করা হয়। আটকের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশু চক্রবর্তীর বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়। এই দুজনকে আটকের পর সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রির সাথে হাসপাতালের কর্মচারী ও অন্যান্য স্টাফের বেশ কয়টি চক্র যে জড়িত, সেটি প্রকাশ্যে আসে।
অবশ্য এরপর থেকেই সরকারি ওষুধ চুরি ঠেকাতে সক্রিয় উঠে চমেক হাসপাতাল প্রশাসন। ঘটনার পরপর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন, পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের এবং সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তীকে বিধি অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল প্রশাসন। এ ছাড়া ওই ঘটনার পরপরই ২৬নং ওয়ার্ডসহ অন্তত ১০টি ওয়ার্ডের সর্দারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর শৃক্সখলাজনিত কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের ৪/৫ জন কর্মচারীকে। কিন্তু এরপরও যেন সরকারি ওষুধ চুরি থেমে নেই। বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে জমানো এক ব্যাগ ওষুধ-স্যালাইন জব্দের ঘটনা যেন সেটাই বলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোজায় স্কুল কলেজে ক্লাসের সময়সূচি প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে খাল দখল করে স্থাপনা