তৃতীয় দিনেও আন্দোলন করছে চুয়েট শিক্ষার্থীরা, এবার দশ দফা দাবি

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল ৯ দফা দাবির কথা বলা হলেও তার সাথে আরও এক দফা দাবি যোগ করেছেন তারা। আন্দোলন নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে এমন দাবিতে সুমন দে নামে চুয়েটের এক শিক্ষকেরও অপসারণ দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দেওয়া এই দশ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার পর সড়কে নামেন চুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বাসের সিট ও টায়ার নিয়ে সড়কের দুই পাশে আগুন লাগিয়ে দেন। এছাড়া গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।

এছাড়া চুয়েট গেটের সামনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হয়ে মিছিল দিতে থাকেন। একটানা ১২টা পর্যন্ত মিছিল দিয়ে গেটের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেও সড়কের দুইপাশে শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে নেয়া না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। স্লোগানে তারা শাহ আমানত ও এবি ট্রাভেলস পরিবহণের রোড পার্মিট বাতিল, নিহত দুই শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা, ঘাতক বাস চালককে গ্রেফতার করা, চুয়েটের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় মামলা দায়েরসহ এদিন আবারও গতকাল থেকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ১০ দফা দাবি উত্তাপনের পাশাপাশি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন তারা।

এরআগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সকল পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বৈঠকের পর চুয়েট প্রশাসন রাতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু এতেও আশ্বস্ত হতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান চুয়েট শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী। দ্রুতগতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। নিহত শান্ত সাহা নরসিংদী সদরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজল সাহার ছেলে এবং তৌফিক হোসেন নোয়াখালী সদর উপজেলার সুধারাম থানার নিউ কলেজ রোডের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হন জাকারিয়া হিমু। তিনি চুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিকের মৃত্যুর ঘটনায় চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে।

দাবিগুলো হলো-
পলাতক ড্রাইভার এবং তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তার,  শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ভুক্তভোগীদের পরিবারকে যথার্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার এবং দাবি মেনে নিতে শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা। চুয়েট কর্তৃপক্ষকে বাদী হয়ে মামলা করা। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের দ্রুত প্রশস্থকরণ কার্যক্রম শুরু এবং এই রুটে দুরপাল্লার বাস ব্যতীত সকল লোকাল বাস (এবি ট্রাভেলস, শাহ আমানত ও অন্যান্য) চলাচল নিষিদ্ধ করা।

চুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে সকল প্রকার প্যাথলজিকাল পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি ইত্যাদি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিতকরণ এবং এই মুহূর্ত থেকে সকল অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেনপূর্ন সিলিন্ডার, শ্বাস প্রদান যন্ত্রের ব্যবস্থাসহ সকল প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিক্যাল সেন্টারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায়ের চিকিৎসক সেবা নিশ্চিত করা।

অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে অপ্রতুল হওয়ায় অতি দ্রুত শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪টি অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করা।

চুয়েটের বাস সংখ্যা বৃদ্ধি, বিআরটিসি কর্তৃক শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বাসের শিডিউল পুনঃনির্ধারণ।

প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক বক্স ও সড়ক পুলিশের অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং সংখ্যা বৃদ্ধি। লাইসেন্স চেকসহ মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো সড়ক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এছাড়া রোড ডিভাইডার, স্পিড ব্রেকার, সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে গাড়ির স্পিডলক ও স্পিড মনিটরিং এর মাধ্যমে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আন্দোলনকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সকল কার্যক্রম রিশিডিউল করা।

এখন থেকে সকল শিক্ষার্থীর যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং এই ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

দাবিগুলো না মানার আগ পর্যন্ত পরীক্ষাসহ সকল ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আন্দোলন নিয়ে কটুক্তি করা চুয়েট শিক্ষকের অপসারণ।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবীর মধ্যে ৭টি দাবী চুয়েট কেন্দ্রিক এবং বাকী দাবীগুলো দ্রুততার সাথে পূরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের সরকারের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকা এবং বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আগামী এক মাস ধরে মোবাইল কোর্ট চালানো এবং এক মাসের মধ্যে সড়ক প্রসস্তকরণের কাজ শুরু করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা হচ্ছে বলে জানান রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির। তাদের যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে সড়ক নিরাপদ করতে কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি এই দুর্ঘটনায় জড়িত ঘাতক চালকদেরও আটকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে কত রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়েছে, তালিকা চাইলেন হাইকোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে গার্মেন্টস কর্মীর ঝু’লন্ত লা’শ উদ্ধার