তুমব্রুর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নেয়া হবে ট্রানজিট সেন্টারে

চূড়ান্ত গণনায় পাওয়া গেল ৫৫৮ পরিবারের ২৯৭০ জনকে, রোববার থেকে সরানোর কাজ শুরু

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৯:২০ পূর্বাহ্ণ

নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রোববার থেকে সরানো হবে বলে জানিয়েছেন কঙবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি সংবাদিকদের বলেন, শূন্যরেখা থেকে বাংলাদেশের তুমব্রুতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চূড়ান্ত গণনা শেষ হয়েছে। বুধবার নাগাদ সেখানে পাওয়া যায় ৫৫৮ পরিবারের ২৯৭০ জন রোহিঙ্গাকে। যাদের মধ্যে দুইতৃতীয়াংশই নিবন্ধিত। এখন তাদেরকে নেয়া হবে স্ব স্ব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আর অনিবন্ধিত এক তৃতীয়াংশকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও উখিয়া টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ঘুমধুমের ঘোনার পাড়া এলাকার ট্রানজিট ক্যাম্পে। তবে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। এদিকে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিগত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা। যার ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট দুপুরে তুমব্রু খালের পূর্বপাশের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। পরদিন ২৯ আগস্ট সকালে সেখানে ৭ হাজার ২শ রোহিঙ্গা পাওয়া যায়। যার সত্যতা স্বীকার করেন এ ক্যাম্পের আমির ছালেহ আহমদ, ১৪ নং সেটের মাঝি আবদুল হাশেম, রোহিঙ্গা নেতা ছিদ্দিক আহমদ।

তারা আরো বলেন, ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ায় সোয়া ৪ হাজারে। এরও ১ মাসের ব্যবধানে ১ হাজার কমে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত এদের সংখ্যা এসে ঠেকে ৩ হাজারেরও কম। ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি ৪ দিন গণনার পর এ সংখ্যা হয় এটি।

সুতরাং ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ও ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ের হিসেব মতে বাকি ৪ হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও অন্যান্য স্থানে পালিয়েছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন এরা গেল কোথায় ? তাদের ধারণা, তারা লোকালয়ে মিশে গেছে। সংখ্যা কমতে থাকে জ্যামিতিক হারেই। এ কারণে ৭ হাজারে ৪ হাজার উধাও।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজা মিয়া জানান, শূন্যরেখা থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে অনেক রোহিঙ্গা লোকালয়ে মিশে গেছে। গত রোববার থেকে গুণে পাওয়া ৩ হাজার রোহিঙ্গা একইভাবে মিশে যাবে, আশংকা তার। তাই দ্রুত এদেরকে অন্যত্র সরানো দরকার। তুমব্রু গ্রামে ত্রিপলের তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া

রোহিঙ্গা ছিদ্দিক আহমদ জানান, তিনি ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ মিয়ানমার থেকে তুমব্রু শূন্যরেখায় আসেন। পরদিন ২৯ আগস্ট শূন্যরেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের গণনা করে পাওয়া গিয়েছিলে ৭ হাজার ২শ। আর ২০২২ সালে ৪ হাজার ২০২৩ সালে এসে সেই সংখ্যা এখন ৩ হাজারে ঠেকেছে। সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাংলাদেশী লোকালয়ে মিশে গেছে। যাদের মধ্যে কয়েকজন মাঝিও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাও জানান, গত ১৮ জানুয়ারি তুমব্রু গ্রামে এসে পালিয়ে যাওয়া বা হদিস না পাওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকায় অনেক নেতা ও মাঝি রয়েছেন।

তুমব্রুতে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের ডাটা এন্ট্রি করা ৮ কর্মীর মধ্যে একজন জাফর আলম। তিনি জানান, তারা সর্বশেষ ৬৫৭ পরিবারের মধ্যে ২৯৭০ রোহিঙ্গার হদিস পেয়েছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাদেরকে স্থানান্তর প্রক্রিয়া দেরি হওয়ায় তারা লোকালয়ে মিশে গেছে বা পালিয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল চট্টগ্রামের পথে ট্রেন চলাচল
পরবর্তী নিবন্ধবেসরকারিভাবে হজে এবার খরচ বাড়ছে দেড় লাখ টাকা