তামাকজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু

৩১ শতাংশ বন নিধনের জন্য দায়ী তামাক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩১ মে, ২০২২ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

 

 

বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট তামাকের এক দশমিক তিন শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আবাদযোগ্য জমিতে এসব তামাক চাষ হয়। এতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিতে আছে দেশ। বাংলাদেশের ৩১ শতাংশ বন নিধনের জন্য তামাক দায়ী। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাশয়ে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশের মৎস্য উৎপাদন। বিশেষ করে বছর দেড়েক আগেও উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও রামগড়ে ব্যাপকভাবে তামাক চাষের কারণে হুমকির মুখে পড়ে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী। এ অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলবার পালিত হবে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। তামাক চাষ, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার এবং তামাকের বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর সে বিষয়ে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘টোব্যাকো: থ্রেট টু আওয়ার এনভায়রনমেন্ট’। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন পাস এবং ২০১৫ সালে বিধি জারি করে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে তামকাজাত দ্রব্যের মোড়ক বা প্যকেটে ৫০ শতাংশ স্থানে সতর্কবার্তা মুদ্রণ করা হচ্ছে। এসডিজি অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অর্ন্তভুক্ত করেছে।

গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরো কয়েক লাখ। বর্তমানে দেশের ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) তথ্য অনুযায়ী, তামাকের পরিবেশগত ক্ষতির একটি বড় কারণ পরোক্ষ ধূমপান। বাংলাদেশের চার কোটিরও অধিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, যার সিংহভাগই নারী। আচ্ছাদিত কর্মস্থলে এবং গণ পরিবহণে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়, এমন ব্যক্তির সংখ্যা যথাক্রমে ৮১ লক্ষ এবং ২ দশমিক ৫ কোটি।

এ বিষয়ে গ্যাটস এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে আচ্ছাদিত কর্মস্থলে কাজ করেন এমন প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠির ৪২ দশকি ৭ শতাংশ (৮১ লক্ষ) পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ২৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লক্ষ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময়, ১৪ দশিক ৭ শতাংশ রেস্তোরাঁয় এবং ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ চাকফির স্টলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রায় ৩৯ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ৮ লক্ষ) বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। প্রতিবছর প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানজনিত বিভিন্ন অসুখে ভোগে।

এদিকে ২০১৯ সালে ‘ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবেকো ফ্রি কিডস্‌ের (সিটিএফকে) সহায়তায় ইপসা পরিচালিত এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরের প্রায় শতভাগ পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ভঙ্গ হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। শহরের ৯৯ শতাংশ সরকারি অফিস, শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৯৭ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, ৯৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শতভাগ গণপরিবহণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ভঙ্গ হচ্ছে। ধূমপান হচ্ছে ৫৪ শতাংশ সরকারি অফিস, ৮১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩৪ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, ৫০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৮৫ শতাংশ গণপরিবহনে ।

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার জানান, বিশ্বে তামাক কোম্পানি বছরে ৮৪ মিলিয়ন টন কার্বনডাইঅঙাইড নির্গমণ, ছয় ট্রিলিয়ন সংখ্যক সিগারেট শলাকা উৎপাদনের জন্য ২২ বিলিয়ন টন পরিমাণ পানি অপচয় এবং ৬০ কোটি বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট এবং ইকোসিস্টেম এ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। প্রতি বছর ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট ফিল্টার আবর্জনা হিসেবে প্রকৃতিতে জমা হয়, যার ওজন প্রায় ৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন। ফেলে দেয়া বর্জ্য হিসেবে এটির অবস্থান শীর্ষে।

প্রজ্ঞার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশেও সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২০২১ অর্থ বছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন সিগারেট শলাকা উৎপাদিত হয়েছে। সিগারেটের ফেলে দেয়া ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় এক দশক সময় নেয়। মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। সিগারেটের বাইরে জর্দা, গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোও প্লাস্টিক কৌটা ও পলিথিন প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হয়। যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রচারণায় যা বললেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল
পরবর্তী নিবন্ধডলার বাঁচাতে বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেমে নজর সরকারের