তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে হবে

| মঙ্গলবার , ১২ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান যুগটা তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এ যুগে এমন কোনো পরিবার নেই, যেখানে মোবাইল নেই। প্রায় সবার পরিবারে আজ স্মার্ট টেকনোলজিক্যাল ডিভাইস আছে। উন্নত মানের না হোক, কাজে লাগাতে পারে এমন মোবাইল আজকাল সবার হাতে হাতে। প্রযুক্তির এই অবাধ প্রবাহ থেকে কেউ মুক্ত নই। এমনকি শিশুরাও। কিন্তু শিশুর ইন্টানেট ব্যবহার রীতিমত উদ্বেগজনক। ইউনিসেফের এক তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি বা প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইন জগতে প্রবেশ করে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় এই প্রবেশ তাদের সামনে উপকার ও সুযোগের বিশাল দ্বার উন্মোচন করে। তবে একই সঙ্গে তাদের ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখেও ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর আধেয় (কনটেন্ট), যৌন হয়রানি ও শোষণ, সাইবার উৎপীড়ন ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার।
ইউনিসেফের ডাটা রিসার্চ ও পলিসি বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইনে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য ব্যাপক বিপদের দ্বার উন্মুক্ত করে। অথচ বিপদগুলো চিহ্নিত করার বদলে আমরা কেবল মূল্যায়নই করে যাচ্ছি। অনলাইনে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকিগুলো দূর করার জন্য নীতিমালা প্রণয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতগুলো অবশ্য কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে শিশুদের অনলাইন জীবনকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে ও তা সুরক্ষিত করার জন্য আরো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
‘বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু এবং ডিজিটাল বিশ্বে শিশুরা‘ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনিসেফ। সেই প্রতিবেদনটি স্পষ্ট করে দেয় যে, ডিজিটাল বিশ্বে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব সরকার, পরিবার, স্কুল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার। এতে বলা হয়েছে, শিশুদের ওপর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে বিশেষ করে প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ শিল্পে বেসরকারি খাতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু এই দায়িত্ব কখনোই যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি। তাই তথ্য ও গোপনীয়তার বিষয়ে নৈতিক মানসহ অনলাইনে শিশুদের উপকারে আসে এবং তাদের সুরক্ষিত রাখে- এমন চর্চাগুলো বাড়াতে বেসরকারি খাতের শক্তি ও প্রভাবকে কাজে লাগাতে হবে।
এ বিষয়ে আমাদের সরকার কতটা অগ্রসর, তা বোঝা যাবে তাদের কর্মতৎপরতায়। অতি সম্প্রতি ‘অনলাইনে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক বা অভিভাবকের ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা থাকলে তারা ছাত্র-ছাত্রী বা সন্তানের জন্য প্যারেন্টাইল গাইডেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারবেন। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানভাণ্ডার হচ্ছে ইন্টারনেট। জ্ঞানের এ জগৎ থেকে শিশুদের দূরে রেখে তাদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না। তবে তাদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে হবে। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে তথ্য সম্পর্কে অসচেতনতা কাম্য হতে পারে না। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তথ্যযুগে অসহায়ভাবে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার ন্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে বাবা-মাকে অধিকতর যত্নশীল হতে হবে। একইভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জগতটাকে যথাযথভাবে গাইড করবেন। নতুন প্রজন্মকে অত্যন্ত মেধাবী মনে করে তিনি বলেন, নতুনদের সঠিকভাবে তৈরি করতে পারলে তারা বিস্ময়করভাবে সফল হবে। আমরা যতবেশি ডিজিটাল হই তারপরও শিশুদের বিকাশে খেলার মাঠ, শ্রেণিকক্ষ লাগবেই। তিনি আরও বলেন, শিশুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। শিশুদের ডিজিটাল যন্ত্র থেকে সুরক্ষায় যে কোনো সুপারিশ ও পরামর্শ বর্তমান সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
আমরাও সঙ্গে সঙ্গে আশ্বস্ত হতে চাই যে শিশুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আগামী প্রজন্ম যেন সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তারজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে