ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল নিয়ে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত নয়

| বুধবার , ১২ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেলকে ব্যবসার জন্য ‘বিষফোঁড়া’ -সে কথাটি অনেক আগে থেকে দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এবার খোদ বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশিও বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল নিয়ে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত নয়। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজিত সপ্তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রপ্তানি মেলা উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক্সেল লোড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আপত্তি শুনছি। ওজন স্কেল নিয়ে সারাদেশের জন্য এক নিয়ম আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য ভিন্ন নিয়ম, এটা আসলে থাকা উচিত নয়। কারণ আমাদের পরিশেষে ভোক্তাদের বিষয়টি দেখতে হবে।
ট্রাকে পণ্য পরিবহনে যদি এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তাহলে পণ্যের দামের ওপর প্রভাব পড়বে। এতে জনিসপত্রের দাম বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের জন্যে হবে কষ্টকর। আমি আবারো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে কথাটা বলবো, এই সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে। সারাদেশে যেভাবে আছে, সেভাবেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে করা হোক। এখন অনেক বড় এক্সেলের গাড়ি হচ্ছে। এতে লোড ডিস্ট্রিবিউট হয়ে যাচ্ছে। সায়েন্টিফিকভাবে দেখে শুনে একটা চিন্তা করা উচিত বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তাদের মুখেও এর প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। তাঁরা বলেছেন, চট্টগ্রামের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। ১৩ টনের ওপরে কোনো ট্রাক চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারছে না। আমরা বারবার বলে আসছি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ওজন স্কেল নিয়ে বৈষম্যের শিকার। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।
ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম চেম্বার চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতা থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রেরিত এক পত্রে বলেছিলেন, চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এলাকায় মহাসড়কে ২০১৮ সালে ১৩ টন ওজনের বাধ্য-বাধকতা নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণ স্কেল চালু করা হয়। এই নিয়ন্ত্রণের ফলে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পায়। ফলে চট্টগ্রামের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে।
দেশের অন্য কোন অঞ্চলে ওজন স্কেল না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ার কারণে সরকারের কাছে এই ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল বাতিল করার জন্য আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে তখন সারাদেশের মহাসড়কে একই ধরনের ওজন স্কেল স্থাপন করা হবে মর্মে সরকারিভাবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জানানো হয়। কিন্তু এতো বছর পার হলেও দেশের আর কোন মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়নি। অথচ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অসম প্রতিযোগিতা ও আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ এই নিয়ন্ত্রণ স্কেল চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কেই কেবল বিদ্যমান রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সক্ষমতা হারাচ্ছে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেনা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের ৩৫ টি মহাসড়কের মধ্যে কেবলমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর দেয়া হয়েছে ওজন স্কেল। ৩৪ টি মহাসড়কে ওজন স্কেল নেই। এসব মহাসড়ক দিয়ে ২৫ টন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক অবাধে চলাচল করতে পারছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম থেকে ১৩ টনের ওপর মাল নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে মাল পরিবহনে যে খরচ, অন্যান্য স্থান থেকে একই পরিমাণ পণ্য নিতে খরচ তার অর্ধেক বা কম। এ কারণে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বিমুখ হয়ে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে অন্যান্য স্থানকে বেছে নিয়েছেন। চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়ানক স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাঁরা বলেন, একদেশে দুই আইন নয়। হয় সব মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপন করতে হবে, অথবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তা উঠিয়ে দিতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তাই রাস্তায় নামার পক্ষে নই। তাঁরা যুক্তিপূর্ণ দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামকে বলা হলেও কার্যত চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে অঘোষিত বাধা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপন চট্টগ্রাম-বিদ্বেষী পদক্ষেপ। অনতিবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করেন চট্টগ্রামবাসী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে