ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

আগামী নির্বাচনে জিততে হলে আওয়ামী লীগকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান নিতেই হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগের কারণে গত চার বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দেশের বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেরও রাজনৈতিক এবং/অথবা কূটনৈতিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ ঐ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতো বলে একটা সাধারণ ধারণা থাকলেও নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশি প্রহরায় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যালট বাক্সগুলো ভরে ফেলার যে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি দেশের অধিকাংশ এলাকায় ঘটানো হয়েছিল তার সত্যতা সম্পর্কে সিংহভাগ জনগণের মনে বিশ্বাস ইতোমধ্যেই দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসেছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে জাপানের সদ্যসাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু আগামীতে জালিয়াতিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিজ নিজ দেশের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করায় ২০১৮ সালের নির্বাচনটির অগ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারটি আবারো সামনে চলে এসেছে। এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ যতই গলাবাজি করুক না কেন ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই অনুধাবন করতে পারার কথা যে এই ব্যাপারটা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় বিরাট ধস নামিয়েছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ আওয়ামী লীগকে পরিত্যাগ করছে। তার কিছুটা আলামত আমরা দেখলাম অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে।

ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানত হারিয়ে চতুর্থ স্থানে পৌছে গেছেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন। কিন্তু, এই দুজনের প্রাপ্ত ভোটের যোগফল গত নির্বাচনের চাইতে দশ হাজার ভোট কমে গেছে। ঐ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী দ্বিতীয় হয়েছেন। আর, নির্বাচনে দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র। যদিও মেয়র নির্বাচনে কিছু স্থানীয় বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবুও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ফলাফলকে রংপুরের ব্যতিক্রমী বাস্তবতা মনে করলে ভুল করবেন। এটাই সারা দেশের আসল বাস্তবতা। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দুর্নীতিবাজ, পুঁজিলুটেরা এবং পুঁজিপাচারকারীদের দল হিসেবে চিহ্নিত করে হয়তো মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। অতএব, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মত সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে একই রকম বিপর্যয় হয়তো আওয়ামী লীগের জন্য সারা দেশে অপেক্ষা করছে। সময় থাকতে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে আগামী নির্বাচনেও জালিয়াতি করা ছাড়া হয়তো তাদের জয়ের কোন পথ খোলা থাকবে না।

একইসাথে, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু, গত চার বছরে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম একেবারেই ‘বাত্‌ কা বাতে’ পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের স্মরণে আছে যে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরপর পাঁচ বছর বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতি গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের বিশ্বর‌্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তক্‌মা অর্জন করেছিল। ঐ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম বছর ক্ষমতাসীন ছিল আওয়ামী লীগ, পরের চার বছর ক্ষমতাসীন ছিল বিএনপিজামায়াত জোট। এরপর সামরিক বাহিনীসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরের শাসনামলে লেঃ জেনারেল হাসান মাসউদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মতিনের নেতৃত্বাধীন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন দুর্নীতি দমন কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচন্ড দমননীতি বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশ ঐ ‘ন্যক্কারজনক চ্যাম্পিয়নশীপ’ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিল। কিন্তু, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দুর্নীতিদমন অভিযানকে গলা টিপে মেরে ফেলার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করে। দুর্নীতি দমনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুদককে স্বাধীনতা দিয়ে যে অর্ডিন্যান্স জারী করেছিল সেটাকে সংসদে পাশ না করায় ওটা তামাদী হয়ে যায়।

এর স্থলে মহাজোটের শাসনামলে পরবর্তীতে যে দুদক আইন পাশ করা হয় তাতে দুদককে অনেকটাই দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। ফলে, আবার দেশে দুর্নীতির তান্ডব পুরোদমে চালু হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে গত নয় বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীীতগ্রস্ত দেশের তক্‌মা অর্জন করে চলেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের বিশ্বর‌্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বারো নম্বর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ণীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদিও দাবি করে থাকেন যে তাঁকে কেনা যায় না তবুও সাধারণ জনগণের মনে যে বিশ্বাসটা গেড়ে বসেছে সেটা হলো দুর্নীতির ব্যাপকতায় বর্তমান সরকারের আমল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলকে ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই গত চৌদ্দ বছরে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার ব্যাপারটা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দৃষ্টি এড়ানো অসম্ভব ব্যাপার। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন এবং উদার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও আমলারা ‘ক্ষমতার আলাদীনের চেরাগ’ পেয়ে যে প্রায় সবাই কোটিপতির কাতারে উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন সে ব্যাপারটা লুকোনোর কোন উপায় আছে কি?

দেশ থেকে বিদেশে পুঁজিপাচার এখন অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সাথে আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রফতানি আয় দেশে ফেরত না আনার মত মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যেক বছর এখন কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫/১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে চলেছে (অথবা বিদেশে হুন্ডিওয়ালাদের কাছে বিক্রিত ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না, কিন্তু তার সমপরিমাণ টাকা হুন্ডিওয়ালাদেরকে প্রদানের মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে), যার অর্ধেকের মত পাচার হচ্ছে হুন্ডি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থায় পৌঁছে গেছে সেটার জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজিপাচার প্রক্রিয়া। পুঁজিপাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, সামরিক অফিসার, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণ গ্রহীতারা। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় যে পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার দাবি করছে সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তার সিংহভাগ চাহিদাকারী ওপরে উল্লিখিত গোষ্ঠীগুলো। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন এবং উদার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও আমলারা যে উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে পুঁজিপাচার করে দেশেবিদেশে আরামআয়েশে দিন গুজরান করছেন সেটাও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ফসল সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশেবিদেশে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

২০২১২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানিব্যয় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, যার প্রধান কারণ ছিল এলএনজি ও তেলসহ পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্টস, ভোজ্যতেল, চিনি, গম ও সারের নাটকীয় আন্তর্জাতিক দামবৃদ্ধি। একইসাথে, আমদানি এল/সি ওভারইনভয়েসিংএর মাধ্যমে পুঁজিপাচারও এর জন্য দায়ী ছিল। সরকার ২০২২ সালের আগস্ট থেকে কঠোর আমদানি নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করায় গত পাঁচ মাসে এল/সি খোলার হার প্রায় ৯ শতাংশ কমে এসেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ‘এল/সি ওভারইনভয়েসিং মনিটরিং’ ব্যবস্থা জোরদার করায় ওভারইনভয়েসিংও খানিকটা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সরকার যদি এপর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন ও পুঁজিপাচারের অন্যান্য পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর দমন কার্যক্রম শুরু করে তাহলে অতি দ্রুত বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের সংকট নিরসনের পথে এগিয়ে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ইতোমধ্যে আইএমএফ এর ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বাংলাদেশ পেয়ে গেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনকে শ্লথ করবে। আর, এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ করার মত কঠোর দমনব্যবস্থা নিলে আগামী মাসগুলোতে ফর্মাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়তে শুরু করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। হুন্ডি ব্যবসার রমরমা অবস্থা ঘটাচ্ছে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ডলারের দামের সাথে কার্ব মার্কেটের ডলারের দামের পার্থক্য ৭৮ টাকায় স্থির থাকা, যার প্রধান কারণ হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজিপাচারের চাহিদার ক্রমবর্ধমান ব্যাপক উল্লম্ফন। অতএব, এই ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কমিয়ে আনতে না পারলে এই দু’টো দামের পার্থক্যকে কমিয়ে আনা যাবে না। শুধু আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দামকে বাজারের সাথে সাযু্‌জ্যপূর্ণ করার জন্য ক্রমান্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যাবে না। হুন্ডিডলারের চাহিদা এত বেশি শক্তিশালী থাকলে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম ক্রমেই বাড়িয়ে ডলারের দুটো দামের পার্থক্যটা ৭৮ টাকায় রেখে দেবে হুন্ডিওয়ালারা। সেজন্যই বলছি, হুন্ডি ডলারের চাহিদাকে দমন করতে চাইলে প্রয়োজন হবে দুর্নীতি দমনকে সত্যিকারভাবে শক্তিশালী করা।

অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে ‘বাত্‌ কা বাত্‌’ বানিয়ে রেখে পুঁজিলুন্ঠন ও পুঁজিপাচার সমস্যার সমাধান পাওয়া অসম্ভব মনে করি। জনগণ যে আওয়ামী লীগকে পরিত্যাগ করছে তারই আলামত আমরা দেখলাম রংপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে। অবশ্য, এটাও বলা প্রয়োজন এখন থেকে যদি সত্যিকারভাবে দুর্নীতি, পুঁজিলুন্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয় তাহলে আগামী দশ মাসে আওয়ামী লীগ তাদের হারানো জনপ্রিয়তা অনেকখানি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সামরিক বাহিনীসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তার জন্য এককভাবে দায়ী ছিল ঐ সরকারের সফল দুর্নীতিদমন অভিযান। মানুষের কাছে দুর্র্নীতি ও পুঁজিলুন্ঠনের জন্য চিহ্নিতহোমরাচোমরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদেরকে ঐ সময় যেভাবে নাকানিচুবানি খেতে হয়েছিল সেটা এখনো আমরা ভুলে যাইনি, আওয়ামী লীগের নেতাদেরও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। (২০০৭ সালের ২০ আগস্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমিছিল)। ঐ ধরনের আরেকটি অভিযান যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিলম্বে শুরু করেন তাহলে তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং ২০২২ সাল ও ২০২৩ সালে বাস্তবায়িত মেগাপ্রজেক্টগুলোর সুফল তিনি আগামী নির্বাচনে ঘরে তুলতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতৃত্ব যদি ভেবে থাকেন যে ২০১৮ সালের মত আবারো ব্যালটজালিয়াতি বা ভোটকেন্দ্র দখল করে তাঁরা বাজিমাত করবেন তাহলে চরম ভুল হবে। ব্যাপারটা দেশেবিদেশে ‘আনচ্যালেঞ্জড্‌’ যাবে না। এর ফলে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের পালে যদি হাওয়া লাগে তাহলে আওয়ামী লীগের খবর আছে। শুধু ভারতের কৃপাধন্য হয়ে এবার সহজে পার পাওয়া যাবে না। তার মানে, আগামী নির্বাচনের আগেপরে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও খুনখারাবি বেড়ে যাওয়ার ‘অশনি সংকেত’ ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। সাধু সাবধান!

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল আজকাল
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাই কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০