ঠিকাদার স্পেক্ট্রার প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সিডিএ’র বাস্তবায়নাধীন বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের পাশে রাতের আঁধারে জমি দখলের অভিযোগে এবার প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালকসহ চারজনকে এজাহারনামীয় করে মামলা করেছেন মোহাম্মদ নুরুল হোছাইন নামেন এক ভুক্তভোগী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় লুটপাট ও দখলের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. রবিউল হক (৪৭), তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানাধীন কানুরামপুর গ্রামের মো. কেয়ামুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। অন্য আসামিরা হলেন, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানাধীন পারিয়ার ফকির বাড়ি গ্রামের মৃত মো. সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ফ ম মমতাজ উদ্দিন (৫৯), রাজধানীর ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার মো. সেকান্দার আলীর ছেলে মোহাম্মদ মেহেদী হাসান (৪৩) ও মীরসরাই থানাধীন নাছির উদ্দিন দিদার (৪৪)। নাছির উদ্দিন দিদার মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এস্কেভেটর দিয়ে ৫০টি পিলার গুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একটি জেনারেটর, এলইডি লাইট, দুই টন লোহা, ১০ হাজার ইট ও ২০০ বস্তা সিমেন্টসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয় এফআইআরে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বায়েজিদ লিংক রোডে রাতের আঁধারে জমি দখল ও লুটপাটের অভিযোগে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজারসহ চারজনকে এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে, ‘বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড; রাতের আঁধারে ‘দখল’ হচ্ছে সড়কের দু পাশ; অসংখ্য স্পটে নতুন নতুন খুঁটি, হচ্ছে স্থাপনা’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। প্রকল্পের আওতায় একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজসহ ছয়টি ব্রিজ এবং কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের ৬ কি.মি. রাস্তা নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। পরে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে শুনানিতে তলব করে সিডিএকে। শুনানিতে পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি এবং ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধনের অভিযোগ করা হয়। শুনানি শেষে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) রুবিনা ফেরদৌসী। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি আরেক শুনানিতে ওই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকেও ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জম হোসাইন। এরমধ্যে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল ইসলাম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে অনুমোদনের বাইরেও পাহাড় কাটার প্রমাণ পান। পরবর্তীতে ৬ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নকশা না মেনে পাহাড় কাটার অভিযোগ তুলেন সিডিএ’র বিরুদ্ধে।
তাছাড়া সড়কটি চলাচলের জন্য পরীক্ষামূলক খুলে দেওয়ার পর সড়কের দুই পাশে শুরু হয় দখল বেদখল প্রক্রিয়া। সিন্ডিকেট করে পাহাড় ও টিলাভূমি দখলে জড়িয়ে পড়েন বড় বড় প্রভাবশালীরা। এদিকে মামলার বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নাছির উদ্দিন দিদারের কাছে জানতে চাইলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে কি না জানি না। আমরাও একটি মামলার কথা বলেছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেক প্রতারণা মামলা ব্যবসায়ীর দেড় কোটি টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা সম্মেলন করার নির্দেশ