ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ‘নিষ্ঠুর খেলা’য় শিশু-কিশোর

দরকার সচেতনতা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাথর ছোঁড়ার যেসব ঘটনা ঘটে, তার সঙ্গে জড়িত কমবেশি ৮০ ভাগই শিশু-কিশোর। তাদের আটক করা হলেও বেশিরভাগ সময় মুচলেকা দিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়। গত ৭ অক্টোবর ফাজিলপুর রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম আউটারে সকাল সোয়া দশটার দিকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের সংবাদ পাওয়া যায়। পরে রেলওয়ে পুলিশ পাথর নিক্ষেপকারী আবদুল আজিজ (৮) এবং তার পিতা জিয়াউল হককে (৪২) আদালতে উপস্থাপন করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত শিশু-কিশোররা এক হয়ে এই পাথর নিক্ষেপের মতো ‘নিষ্ঠুর খেলা’য় মেতে ওঠে। এতে প্রায়ই যাত্রীরা গুরুতর আহত হচ্ছেন। ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ট্রেনের। দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে প্রতি মাসে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার সব ঘটনা আবার পরিসংখ্যানেও আসে না। রেল পুলিশের দাবি, পাথর ছোঁড়া প্রতিরোধে তারা নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিকার খুঁজছে রেল পুলিশ : চট্টগ্রাম রেলওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, পাথর নিক্ষেপ বন্ধে সচেতনতার বিকল্প নেই। অনেক সময় দেখা যায় কেউ মজা করতে বা খেলাচ্ছলে পাথর নিক্ষেপ করে থাকে। কিন্তু এতে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তি আমাদের কারও পরিবারের সদস্য হতে পারে, হতে পারে কারও মা, বাবা, ভাই-বোন কিংবা কারও সন্তান। পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুলের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ সকলকে সম্পৃক্ত করে গত ৪ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন জনসচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।
রেল পুলিশের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার আওতাধীন বাড়বকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন, ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন, ফৌজদারহাট রেলওয়ে স্টেশন, পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন, কুমিরা রেলওয়ে স্টেশন, বারৈয়াঢালা রেলওয়ে স্টেশন, ফুলতলা রেলওয়ে এলাকা, লাকসাম রেলওয়ে থানার আওতাধীন আলী শহর রেলওয়ে স্টেশন, ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন, গুনটি ব্রীজ এলাকা, শশীদল রেলওয়ে স্টেশন, ফাজিলপুর রেলওয়ে স্টেশন, লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন, লালমাই রেলওয়ে স্টেশনে জনসচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রণোদনা ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগও করা হচ্ছে।
আইন কী বলে : চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ একটি অপরাধ। ১৮৯০ সালের বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা দশ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে পাথর নিক্ষেপে রেলযাত্রীর মৃত্যু হলে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তদুপরি জরিমানার বিধান রয়েছে।
১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইন অনুয়ায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের অপরাধের ক্ষেত্রে অভিভাবকের শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে জানা গেছে, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার সঙ্গে শিশু কিশোররা জড়িত থাকায় বেশির ভাগ সময়ই থানা থেকে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা।
পূর্বাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ যেসব এলাকা : ঢাকার কাওরানবাজার, ঢাকার বিমানবন্দর, গাজীপুরের টঙ্গী, জয়দেবপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, জগন্নাথগঞ্জ ঘাট, দেওয়ানগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, কিশোরগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সীতাকুণ্ড, পাহাড়তলী, বটতলী ও নরসিংদীতে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটে বলে প্রায়ই খবর আসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৩৩ জনপ্রতিনিধির শপথ গ্রহণ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র