টিটিইর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার

অবৈধ সুবিধা না দিতে রেলমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশনা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৯ মে, ২০২২ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

দুদিন ধরে সমালোচনার পর রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকেট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানালেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। গতকাল রোববার দুপুরে রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শফিকুলকে তড়িঘড়ি বরখাস্তের আদেশ দেয়া বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশীর ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে নোটিশ দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানালেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে পাবনার পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। যেহেতু আমি রেলওয়ের জন্য কাজ করি, দেশের জন্য কাজ করি, আমাকে আবার কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়েছে, তাতে আমি খুশি। খবর বিডিনিউজের।

এদিকে রেলমন্ত্রীর স্বজনদের এক কেলেঙ্কারির পর এই ধরনের পরিচয়ে কেউ বাড়তি সুবিধা চাইলেও তা না দিতে রেলকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রেলপথ মন্ত্রণালয় এমন এক আদেশ জারি করেছে। তা পাঠানো হয়েছে রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, সব স্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, ট্রেনের পরিচালককে।

রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয় পরিচয়’ দিয়ে বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করেছিলেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। আর রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর শাম্মী আক্তার মনি অভিযোগ করেন, তার আত্মীয়দের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন টিটিই শফিকুল। ওই অভিযোগ পেয়ে পাকশীর ডিসিও বরখাস্ত করেন শফিকুলকে।
মন্ত্রী শনিবার আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করলেও গতকাল বলেন, টিকেট ছাড়া ভ্রমণ করা যাত্রীরা যে তার আত্মীয়, তা তিনি জানতেন না। ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। এখানে যদি দেখা যায় আমার স্ত্রী কোনো ভুল করে থাকে… ইয়ে করে থাকে… আমার কোনো নলেজে ছিল না…। মেসেজটা যেভাবে গেছে সেটা সঠিক হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত ঈদের পরদিন ৪ মে রাতে। আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী থেকে ঢাকাগামী তিন যাত্রী বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। এসময় তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে পরিচয় দেয়।

পরে ওই তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম। পরদিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। টিআইবি এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শফিকুলকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

অবৈধ সুবিধা না দিতে ফের নির্দেশনা : রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়/পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে টিকেট দাবি করা, ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হচ্ছে।

এছাড়া অনেকেই মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে রেলের পরিচালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করছেন। এসব বিষয় জানার পর তা রেলপথ মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা যারা চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং যেসব মোবাইল নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঠিক পরিচয় জানার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় মন্ত্রী। এই ধরনের ক্ষেত্রে রেল কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

টিটিই শফিকুল বললেন শুকরিয়া : সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানালেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে পাবনার পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তিনি বলেন, এটাই আমার প্রথম সাময়িক বরখাস্ত। এর আগে কখনও সাময়িক বরখাস্ত হইনি। ওই রাতে যখন আমি গাড়িতে দায়িত্ব পালন করেছি, সেদিন আপ অ্যান্ড ডাউনে ৭৮ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় করে জমা দিয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমন্ত্রীর স্ত্রীর কথায় টিটিইকে বরখাস্ত করা সমীচীন হয়নি : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিকরা বাড়াবাড়ি করছে